বুধবার, ১১ জুন ২০২৫, ০৫:৩২ পূর্বাহ্ন

নবীগঞ্জে মা ও ২ সন্তান পাশাপাশি চিরনিদ্রায় ॥ শোকে ভাসছে মামদপুরবাসী ॥ পুলিশকে গুরুত্বপুর্ণ তথ্য দিয়েছে আটক স্বামী ফরিদ

  • আপডেট টাইম মঙ্গলবার, ২৪ মার্চ, ২০১৫
  • ৫৫৩ বা পড়া হয়েছে

এটিএম সালাম, নবীগঞ্জ থেকে ॥ শোকে ভাসছে নবীগঞ্জের মামদপুর গ্রামবাসী। রুমেনা ও তার ২শিশু সন্তানের মৃত্যুকে কোনভাবেই মেনে নিতে পারছেনা গ্রামবাসী। গত রবিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে হবিগঞ্জ মর্গ থেকে মা ওসন্তানসহ ৩টি লাশ রুমেনার পিতা মাসুক মিয়ার নিকট হস্তান্তর করার পর নিয়ে যাওয়া হয় গজনাইপুর ইউনিয়নের মামুদপুরে। এ সময় গ্রামজুরে এক শোকাবহ পরিবেশ সৃষ্টি হয়। আত্মীয়স্বজনদের পাশাপাশি উপস্থিত কেউই কান্না ধরে রাখতে পারেনি।
এদিকে গতকাল সোমবার সকাল ১০টার দিকে মামদপুর গ্রামে পিতার বাড়ির পাশের মাঠে অশ্র“সজল নয়নে মা, ছেলে ও মেয়ের জানাজার নামাজ এক সাথে আদায় করেন গ্রামবাসী। পরে তাদেরকে পাশাপাশি কবরস্থানে তাদেরকে দাফন করা হয়। জানাজার পূর্বে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়াম্যান আবুল খায়ের গোলাপ সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন। এ সময় তিনি অভিযোগ করেন, একটি সহজ সরল মেয়ে রুমেনা বেগম। তার স্বামী ও লোকজন পরিকল্পিতভাবে ওই মেয়ে এবং তার সন্তানদের হত্যা করেছে। তিনি খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী করেন। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ওয়ার্ড মেম্বার তোফাজ্জুল হক বকুল, সাবেক মেম্বার জাহেদ আহমদসহ দিনারপুর পরগনার বিপুল পরিমান নানা শ্রেণী পেশার মানুষ। ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, এ ঘটনায় তার ইউনিয়নবাসী চরম মর্মাহত। তারা রুমেনা এবং তার সন্তানদের হত্যাকারীদের বিচার দাবী করেন।
অপরদিকে হত্যাকান্ডে জড়িত মামলার আসামীরা গা-ঢাকা দিয়েছেন। পুলিশ এ মামলাটিকে বেশ গুরুত্বসহকারে দেখছে। আসামীদের ধরতে চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ।
হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার ভাকৈর গ্রামে রহস্যজনকভাবে মৃত্যু হয় ফরিদ উদ্দিনের স্ত্রী রুমেনা বেগম, ছেলে মুছা মিয়া ও মেয়ে মুসলিমা খাতুনের। ফরিদ দাবী করছেন তার স্ত্রী দুই সন্তানকে হত্যার পর নিজে আত্মহত্যা করেছে। অপরদিকে রুমেনার পিতার পরিবার দাবী করছে তাদেরকে রুমেনার স্বামীসহ স্বামীর পরিবারের লোকজন হত্যা করেছে। এ ঘটনায় ফরিদ উদ্দিনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। রুমেনার চাচা আশুক মিয়া বাদী হয়ে ফরিদ উদ্দিনসহ ৬জনকে আসামী করে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।
এ ব্যাপারে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আশেকুল ইসলাম বলেন, ধৃত আসামী ফরিদ উদ্দিনের কাছ থেকে গুরুত্বপুর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। তবে তদন্তের স্বার্থে বলা সম্ভব নয়।
মামলার এজাহার অনুযায়ী রুমেনার স্বামী ফরিদের পরকিয়া প্রেমে বাঁধা দিতে গিয়েই এধরণের নিষ্ঠুর হত্যাকান্ড ঘটেছে।
নিম্নে মামলার এজাহারটি হুবহু তুলে ধরা হল :
বিনীত নিবেদন এই যে, আমি নিন্ম স্বাক্ষরকারী আশুক মিয়া থানায় হাজির হইয়া এই মর্মে অভিযোগ দায়ের করিতেছি যে, আমার ভাতিজি রমেনা বেগম (৩৫)কে গত ২০১২ সালে ১নং আসামী ফরিদ মিয়ার সহিত বিবাহ দেই। আমার ভাতিজির ১টি ছেলে, ১টি মেয়ে সন্তান ছিল। তাহার স্বামী ফরিদ মিয়ার স্বভাব চরিত্র ভাল নয়। অন্য এক মহিলার সহিত ১ নং আসামী ফরিদ মিয়ার অবৈধ সম্পর্ক রহিয়াছে বলিয়া আমার ভাতিজি প্রায় সময় আমাদের বাড়িতে বেড়াইতে আসিয়া আমাদের নিকট বলিত। আমার ভাতিজি রমেনা বেগম আরো জানায়, সে তাহার স্বামীকে অন্য মহিলার সাথে অবৈধ মেলামেশায় বাধা দিলে তাকে মারপিট করিতঃ এবং সন্তানসহ খুন করিয়া ফেলিবে বলিয়া হুমকী দিত। রুমেনা বেগম ঘটনাটি উল্লেখিত অপরাপর আসামীদেরকে জানাইয়া বিচার প্রার্থী হইলে অপরাপর আসামীগণ আমার ভাতিজি রুমেনাকে মিথ্যা কথা বলিতেছে অপবাধ দিয়া ২ নং আসামী বুরহান উদ্দিন ৩ নং সাব উদ্দিন, ৪ নং ফাতেমা বেগমও ৫ নং আসামী তারা মিয়া আমার ভাতিজিকে মারপিট করিয়াছে। এবং সকল আসামীগণ হুমকী দিত ভবিষ্যতে আমার ভাতিজা ফরিদ মিয়ার অবৈধ সম্পর্কের বিষয়ে কোন প্রকার প্রতিবাদ করিলে বা আমাদেরকে জানাইলে তাকে তার সন্তানসহ খুন করিয়া ফেলিবে। ঘটনার অনুমান ১০ দিন পুর্বে আমার ভাতিজি রুমেনা বেগম আমাদের বাড়িতে আসিয়া জানায় তাহার স্বামী আসামী ফরিদ মিয়া বাজার সদাই, ডাল, চাল ঘরে আনে না, প্রায় দিন রাতেও ঘরে আসে না। সে তাহার বাচ্চাদের নিয়া অনাহারে, অর্ধাহারে দিন কাটাইতেছে। এই কথা শুনিয়া আমার স্ত্রী রাজিয়া বেগম ৩টি জামা ও নগদ ২০০/ টাকা দিলে রুমেনা বেগম তাহার সন্তানদের নিয়া স্বামীর বাড়ি চলিয়া আসে। ২২/০৩/২০১৫ইং তারিখ ভোর অনুমান ৪.৩০ ঘটিকার সময় ৩ নং আসামী সাব উদ্দিন আমার ছেলে শাহীনকে মোবাইল ফোন করিয়া জানায় যে, ১ নং আসামী ফরিদ মিয়া তাহার স্ত্রী আমার ভাতিজি রুমেনা বেগমকে ও তার ছেলে মুছা মিয়া (৭), মেয়ে মুসলিমা বেগম(৪)কে খুন করিয়াছে। এবং নিজেও মরে যাওয়ার চেষ্টা করিতেছে। এই সংবাদ পাইয়া আমি আমার ৩ ভাই ও ৪ ভাইয়ের স্ত্রীগণ সকাল অনুমান ৭ ঘটিকার সময় আসামীদের বাড়িতে পৌছিয়া আমার ভাতিজির মৃতদেহ ১নং আসামী ফরিদ মিয়ার বসত ঘরের উত্তর পার্শ্বে জারুল গাছের ডালের সহিত ওড়না দিয়া ঝুলন্ত অবস্থায় এবং তাহার দু’বাচ্চার মৃতদেহ ১ নং আসামীর বসত ঘরের মেঝেতে পড়ে আছে দেখিতে পাই। এ সময় আসামী ফরিদ মিয়াকে বাড়িতে পাই। অন্যান্য আসামীদেরকে পাই নাই। ১ নং আসামীর অজ্ঞাত মহিলার সহিত অবৈধ সম্পর্কে আমার ভাতিজি রুমেনা বেগম এবং তাহার শিশু বাচ্চাগণ প্রতিবাদ করায় ১ নং হইতে ৫ নং আসামীগণ পুবর্ পরিকল্পিতভাবে একে অপরের সহায়তায় ২২-০৩-২০১৫ইং তারিখ রাত অনুমান ১২ ঘটিকা হইতে ভোর অনুমান ৪.৩০ ঘটিকার মধ্যে যে কোন সময় আমার ভাতিজি ও তাহার বাচ্চাদের আসামীগণ তাহাদের বসত ঘরে অথবা বসত ঘরের বাহিরে যে কোন স্থানে মারপিট করিয়া অথবা শ্বাসরোধ করিয়া হত্যা করতঃ আমার ভাতিজির লাশ পাশের জারুল গাছের ডালের সহিত ওড়না দিয়া ঝুলাইয়া রাখিয়াছে। এবং বাচ্চাদের লাশ ঘরের ভিতর মাটিতে ফেলিয়া রাখিয়াছে। ঘটনার সংবাদ পাইয়া নবীগঞ্জ থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে যাইয়া মৃতদেহগুলির সুরত হাল প্রতিবেদন প্রস্তুতপূর্বক ময়না তদন্তের জন্য হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে প্রেরণ করিয়াছেন। আমি বিস্তারিত ঘটনা অবগত হইয়া আসামীদের নাম ঠিকানা সংগ্রহ করিয়া থানা আসিয়া অভিযোগ দিতে বিলম্ব হইল।
অতএব, উক্ত বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে মর্জি হয়।
স্বাক্ষর ঃ-আশুক মিয়া।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2021 HabiganjExpress.Com
Design and Development BY ThemesBazar.Com