এক্সপ্রেস রিপোর্ট ॥ আজ ৭ রমজান। মাহে রমজানে দৈহিক, মানসিক ও আধ্যাত্মিক শৃঙ্খলা অর্জনের এক অপূর্ব সুযোগ লাভ করে সায়িম বা রোজাদার। দৈহিক ও মানসিক পরিচ্ছন্নতা আধ্যাত্মিক উন্নয়নের প্রধান শর্ত। ইসলামে ইলম বা বিদ্যাকে কয়েক শ্রেণীতে বিন্যাস করা হয়েছে, যার মধ্যে ইলম ফিক্হ ও ইলমে তাসাওউফ বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য। ইসলামের আইনসমূহের সমষ্টিই ইলমে ফিক্হ। এতে বাহ্যিক জীবন যাপনের ব্যবস্থাবলী ও আইন কানুন একত্রিভূত হয়েছে। ফিক্হ হচ্ছে ইসলামের আইন শাস্ত্র। ইলমে ফিক্হ হতে বাহ্যিক বিধি বিধান ও আইন কানুন বিষয়ক শিক্ষা লাভ করা যায়। আর ইলমে তাসাওউফ বাহ্যিক ও আধ্যাত্মিক উভয় বিধানের নিরিখে মানুষের অন্তর গভীরে লুকিয়ে থাকা রিপুসমূহ কাবু করার পদ্ধতি বাতলিয়ে দেয় এবং আল্লাহর মুহব্বত ও মারিফাত হাসিলের প্রত্যক্ষ তালিম ব্যবস্থা প্রদান করে। শরিয়ত, তরিকত, হকিকত ও মারিফাতের সমন্বয়ে যে বিজ্ঞান তারি নাম ইলমে তাসাওউফ। এ বিজ্ঞান কলব, রুহ, সির্র, খফী আখ্ফা, নফ্স, আব, আতস, খাক্, বাদ- এ দশ লতীফার প্রত্যেক মুকামকে নূর আর নূরের বিচ্ছুরণ দ্বারা নূরানী বা জ্যোতির্ময় করে দেয়। ফলে আল্লাহর কুদরতের প্রত্যক্ষ দর্শন লাভ করা যায়, আল্লাহর পরিচয় স্পষ্ট হয়ে যায়। আল্লাহর জাত ও সিফাতের সঙ্গে আল্লাহর আসমাউল হুসনাত সঙ্গে সম্যক পরিচয় ঘটে। ইলমে তাসাওউফে যিনি কামিল হন তাকে সুফী বলা হয়। সূফী গণ বিলায়েত বা আধ্যাত্মিক সাম্রাজ্যের অধিকার লাভ করেন। যাঁরা সূফী পর্যায়ে উন্নীত হয়ে ইলমে তাসাওউফ অন্যকে তালিম দেবার, তাওয়াজ্জুহ ও ফয়েজ প্রদান করার যোগ্যতা অর্জন করেন এবং কিলাফত ও ইজাজত প্রাপ্ত হন তাঁরাই ইলমে তাসাওউফের শিক্ষক বা পীর মুর্শিদ। ইলমে তাসাওউফ শিক্ষার্থীকে সালিক বা মুরীদ বলা হয় এবং শিক্ষালয়কে বলা হয় খানকা শরীফ। ইলমে ফিকহ হাসিল করা যেমন কর্তব্য, তেমনি ইলমে তাসাওউফ অর্জন করাও কর্তব্য। যারা ইলমে তাসাওউফ মানে না তারা বিভ্রান্তির বেড়া জালে আবদ্ধ। ইলমে তাসাওউফে বেশ কয়েকটি তরিকা রয়েছে। যেমন কাদেরিয়া তরিকা, চিশতীয়া তরিকা, নকশে বন্দিয়া তরিকা, মুজাদ্দিদীয়া তরিকা, সুহরাওয়ারদীয়া তরিকা, মোহাম্মদিয়া তরিকা প্রভৃতি। ইলমে তাসাউফ অর্জন করতে হলে হক্কানি পীরের নিকট মুরিদ হওয়া জরুরী। তাসাওউফের ‘তা’ অক্ষরের সাথে পরিচিত নয় এমন কিছু ভন্ড ও প্রতারক সূফী সম্রাট, শাহানশাহ, বাবাজান, কিবলা জান, দয়াল বাবা, খাঁজা বাবা প্রভৃতি লকব ধারণ করে দালাল লাগিয়ে বিরাট বিরাট তোরণ স্থাপন করিয়ে দেয়াল লিখন লিখিয়ে মহা সমাবেশ মহা সম্মেলন ওরস ইত্যাদির নামে গরু উঠের সমারোহের মাধ্যমে লোক জড়ো করিয়ে ব্যবসা ফেদে বসেছে। তারা লোককে প্রতারিত করে অর্থের পাহাড় গড়ে তুলেছে। এ প্রতারক ও ভন্ডদের খপ্পর হতে নিজেকে বাঁচাতে হবে, নতুবা ইমান বরবাদ হয়ে যাবে।
মাহে রমজানের সিয়াম যে দৈহিক, মানসিক ও আধ্যাত্মিক শিক্ষায় বলিয়ান করে তা অসত্যের বিরুদ্ধে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার তাগিদ দেয়।