নবীগঞ্জ প্রতিনিধি ॥ নবীগঞ্জ উপজেলা সদর ইউনিয়নের ভূমি অফিসের উপ-সহকারী ভূমি কর্মকর্তা (বরখাস্তকৃত) আবিদ আলীর বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহনের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। আবিদ আলীর বিরুদ্ধে মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্প আশ্রয়ন-২ এর ‘ক’ তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তির করে দেয়ার কথা বলে বিভিন্ন উপকারভোগীদের কাছ থেকে উৎকোচ নেয়ার অভিযোগ উঠে। তদন্তে প্রমাণিত হওয়ায় আবিদ আলীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহনের সুপারিশ করেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুমাইয়া মমিন। এছাড়াও গত ২১ জুন ৪০ হাজার টাকা ঘুষ কেলেংকারীর আরেকটি অভিযোগ উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবরে দেন রিফাতপুর গ্রামবাসীর পক্ষে মোঃ হাসান আলী। মায়ারুন বেগম নামের আরেক ভূমিহীন মহিলা ভূমি বন্দোবস্তসহ আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর পাইয়ে দেয়ার কথা বলে ৫ হাজার টাকা উৎকোচ নেন উক্ত আবিদ আলী। ইতিমধ্যে হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসক উক্ত আবিদ আলীর বিরুদ্ধে ঘুষ দুর্নীতির অভিযোগ প্রমানিত হওয়ায় সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেন।
সুত্রে জানা যায়, নবীগঞ্জ পৌর এলাকার চরগাঁও গ্রামের মছদ্দর চৌধুরীর ছেলে আলম চৌধুরীর নিকট থেকে ১ কেদার ভূমি বন্দোবস্ত, ঘর ও গাভী প্রদান করবেন মর্মে ৫০ হাজার টাকা উৎকোচ নেন তৎকালীন উপ-সহকারী ভূমি কর্মকর্তা আবিদ আলী। পরবর্তীতে তিনি উক্ত আলম চৌধুরীকে ভূমিহীন উল্লেখ্য করে একটি আবেদনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ন প্রকল্প-২ এর “ক” তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তি করে ২ শতক ভূমি রেজিস্ট্রারী করা হয় এবং মান্দারকান্দি আশ্রায়ন প্রকল্পে একটি ঘর বরাদ্ধ দেয়া হয়। ২ শতক ভূমি রেজিস্টারী হওয়ার পর আলম চৌধুরী ইউনিয়ন উপসহকারী ভূমি কর্মকর্তা আবিদ আলীর বিরুদ্ধে ৫০ হাজার টাকা উৎকোচ গ্রহনের অভিযোগ করেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে নবীগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুমাইয়া মমিন তদন্ত করেন। তদন্তকালে প্রতীয়মান হয় উক্ত আলম চৌধুরী ভূমিহীন নয়, তার নিজস্ব ৫ শতক ভূমি থাকা সত্ত্বেও উক্ত উপসহকারী ভূমি কর্মকর্তা আবিদ আলী তাকে ভূমিহীন উল্লেখ করে তার নামে বন্দোবস্ত প্রস্তাব প্রেরন করেন। তদন্তে আরও উল্লেখ্য করেন চরগাঁও গ্রামের আল আমীন ও ফয়জুর রহমান চৌধুরীর আবেদন দু’টি তদন্ত পুর্বক প্রতিবেদন দেয়ার জন্য বলা হলে আবিদ আলী তাদেরকে ভূূূূমিহীন উল্লেখ্য করে প্রতিবেদন দেন। এ বিষয়ে অভিযোগ পাওয়া গেলে পুণঃতদন্তে উক্ত আল আমীন ও ফয়জুর রহমান চৌধুরী উভয়ই অনেকাংশে স্বচ্ছল ব্যক্তি এবং পাঁকা বাড়িতে বসবাস করেন। এদিকে রাজাবাদ গ্রামের আব্দুর রব এর স্ত্রী অসহায় মায়ারুন বেগম নামের এক মহিলার কাছ থেকে প্রধানমন্ত্রীর উপহার ভূমি বন্দোবস্ত ও ঘর এনে দেয়ার কথা বলে ৫ হাজার টাকা উৎকোচ গ্রহন করেন আবিদ আলী। কিন্তু তাকে কোনটাই দেয়া হয়নি। তদন্তে উল্লেখ্য করা হয়, আবিদ আলী প্রত্যেকের নিকট থেকে উৎকোচ গ্রহন করে বিধি বহির্ভুতভাবে “ক” তালিকায় পুণরায় যাচাইপুর্বক অন্তর্ভুক্ত করেছেন।
এ ব্যাপারে তদন্ত কর্মকর্তা একাধিকবার নোটিশ এবং ফোনে হাজির জন্য বলা হলেও তিনি উপস্থিত হন নি। তদন্ত কর্মকর্তা নবীগঞ্জ সদর ইউনিয়ন উপসহকারী ভূমি কর্মকর্তা আবিদ আলীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি পুনঃরায় যাচাইয়ান্তে সঠিক না হওয়ায় স্থায়ী বন্দোবস্ত মামলা নং ৭৪/২০-২১, ৭৬/২০-২১ ও ৭৭/২০-২১ বাতিল করার জন্য উপজেলা খাস জমি বন্দোবস্ত ও ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় উপস্থাপন পুর্বক পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহনের জন্যও সুপারিশ করেছেন। অপর দিকে উপজেলার বাউসা ইউনিয়নের রিফাতপুর গ্রামবাসীর কাছ থেকে সরকারী গোপাট রকম ভূমি অবৈধ দখলদারদের কবল থেকে উচ্ছেদ করে দেয়ার কথা বলে ৪০ হাজার টাকা উৎকোচ গ্রহনের অভিযোগ তদন্তাধিন রয়েছে। ভোগক্তভোগীরা উক্ত আবিদ আলীর বিরুদ্ধে কটোর শান্তিমুলক ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য দাবী জানিয়েছেন।