শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ১১:৫৯ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::
হবিগঞ্জ শহরের বিভিন্ন ক্লিনিকে স্বাস্থ্য বিভাগের অভিযান প্রাণীসম্পদ সেবা সপ্তাহে এমপি আবু জাহির ॥ চাকরির পেছনে না ছুটে উদ্যোক্তা হওয়ার আহবান তরুণদের প্রতি কালিয়ারভাঙ্গায় ঘটনাস্থলে না থেকেও প্রবাসীসহ ৪ ব্যক্তি আসামি হওয়ায় ক্ষোভ শহরে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চুরির ঘটনায় আটক ৫ ॥ মালামাল উদ্ধার বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দায়িত্ব গ্রহণ ॥ দুর্নীতিমুক্ত জেলা পরিষদ গঠনের ঘোষণা দিলেন আলেয়া আক্তার হবিগঞ্জের শিরিষ তলায় খেলাঘরের বর্ষবরণ মাধবপুরে বিলুপ্ত প্রজাতির লজ্জাবতী বানর উদ্ধার বানিয়াচঙ্গে প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনী উদ্বোধন মাধবপুরে খামারীদের নিয়ে আলোচনা সভা হাছান মাহমুদের সঙ্গে গ্রিসের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠক ॥ ঢাকায় গ্রিসের দূতাবাস স্থাপন ও জনশক্তি রপ্তানি নিয়ে আলোচনা

আটক গোষ্ট দেব ও তপন দাশের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি ॥ জিম্মায় মুক্তি ॥ নবীগঞ্জে আলোচিত জ্যোৎস্নœœাকে টাকার বিনিময়ে হত্যা করা হয়!

  • আপডেট টাইম শনিবার, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৫
  • ৪৩৫ বা পড়া হয়েছে

নবীগঞ্জ প্রতিনিধি ॥ নবীগঞ্জের পৌর কাউন্সিলর মিজানুর রহমানকে ফাসাঁনোর জন্য হবিগঞ্জের জ্যোৎস্নœা বেগমকে ৫ লাখ টাকার বিনিময়ে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যার নতুন ক্লু পাওয়া গেছে। নিরীহ জ্যোৎস্না বেগমের হত্যাকান্ডের চাঞ্চল্যকর এমন তথ্য বেরিয়ে এসেছে ধৃত আসামী ছদর মিয়া ও তাজ উদ্দিনের আদালতে ১৬৪ ধারায় দেয়া জবানবন্দি এবং তৎকালীন নবীগঞ্জ থানার অফিসার ইর্নচাজ মোঃ লিয়াকত আলীর দেয়া প্রতিবেদন থেকে।
ডিবি পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ শেষে মোবাইল ফোন উদ্ধারের সময় আটককৃত গোষ্ট দেব ও তপন দাশের ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি আদালতে প্রদান করে। গতকাল শুক্রবার হবিগঞ্জের বিজ্ঞ জুডিশিয়াল মেজিস্ট্রেট নিশাত সুলতানার আদালতে জবানবন্দি প্রদানকালে তপন দাশ জানায়, সে উক্ত মোবাইল প্রায় ৭ মাস পুর্বে মায়ানগর গ্রামের সিএনজি চালক ছদর মিয়ার নিকট থেকে ৭৫০ টাকায় খরিদ করে। পরে ব্যক্তিগত প্রয়োজনে একই গ্রামের গোষ্ট দেবের নিকট বিক্রি করে। তপন দাশ আরো জানায়, পূর্ব পরিচয়ের সুত্রধরে ছদর মিয়া ওই মোবাইলটি বিক্রি করার জন্য তাকে অনুরোধ করলে সে খরিদ করে। গোষ্ট দেব তার জবান বন্দিতে প্রায় ৭ মাস আগে তপন দাশের নিকট থেকে ৭ শত টাকায় উক্ত মোবাইল খরিদ করার কথা স্বীকার করেছে। পরে বিজ্ঞ আদালত তাদের জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করে তাদেরকে নিজ নিজ জিম্মায় জামিন প্রদান করেন।
ছদর মিয়ার হুবুহুবু জবানবন্দি নিন্মে দেয়া হলো ঃ-
নাম ছদর মিয়া, মিজানুর রহমান ১নং ওয়ার্ড কমিশনারের বাড়ি হতে দেড় কিঃ মিঃ দুরে পশ্চিম দিকে। আমি আগে রিক্সা চালাইতাম। পরবর্তীতে আমার ওস্তাদ এর সিএনজি আনুমানিক ৪ মাস ধরে আমি চালাতাম। আমার ওস্তাদ তাজ উদ্দিন এর পিতার নাম কুবাদুল্লা সাং পুরুষোত্তমপুর, নবীগঞ্জ। ঘটনার দিন অর্থাৎ ঐ মহিলা কোন তারিখে মারা যায় স্মরন নাই। আনুমানিক ৫ টার দিকে নবীগঞ্জ ষ্ট্যান্ডে তাজ উদ্দিন আমাকে এসে বলে, আউশকান্দি থেকে একটি টিপ আনতে হবে। আমি তখন নবীগঞ্জ ষ্ট্যান্ডে বদলী গাড়ী চালাতাম। তাজ উদ্দিন তার সিএনজি গাড়িসহ এসেছিল। তাজ উদ্দিনের সাথে আল আমীন পিতা হাজী আব্দুল্লাহ সাং মদনপুর, থানা নবীগঞ্জ, জেলা হবিগঞ্জ ছিল। আনুমানিক ৫/৬ টার দিকে আমি তাজ উদ্দিনের আনীত সিএনজি গাড়ী চালিয়ে তাজ উদ্দিন ও আল আমীনসহ আউশকান্দিতে পৌছি অনুমানিক ৭টার দিকে। আউশকান্দির গোল চত্বর মোড় হতে একজন মহিলা যার নাম জ্যোৎস্নœা বেগমকে নিয়ে আল আমীন ও তাজ উদ্দিনসহ আল আমীনের নতুন বাড়ি (মায়া নগর-সাকুয়া রাস্তার পাশে) তে নামিয়ে দিই। তখন রাত ৮/৮.১৫ মিনিট হবে। ওদেরকে নামিয়ে দিয়ে আমি অন্য যাত্রী নিয়ে শেরপুর চলে যাই। অনুমানিক রাত ১০ টার দিকে আমার মোবাইল নং ০১৭৪৪৭০১৫৩৮ এ কল দেয় জাকির পিতা আব্দুল লতিফ, সাং গন্ধ্যা, নবীগঞ্জ। জাকির এর মোবাইল নং স্মরন নাই। তবে গ্রামীন নম্বার ছিল। জাকির এর কল আমি ধরতে পারিনি। আনুমানিক রাত ১.৩০ ঘটিকার দিকে আকবর উদ্দিন পিতা অজ্ঞাত বয়স ৩২/৩৫, সাং গন্ধ্যা, নবীগঞ্জ আমাকে ঘুম থেকে জেগে তুলে মায়া নগর রোডে মায়া নগর মসজিদের পাশে বলে “একটা টিপ মারতে হবে। আকবরের সাথে মসজিদের পাশে তাজ উদ্দিন ও ছিল। তাজ উদ্দিন আমাকে তার সিএনজি গাড়ীটি নিয়ে আসতে বলে। আমি টুকের বাজার হতে গাড়ী এনে মসজিদের কাছে রাখি। রাস্তার পাশের জমি হতে আকবর উদ্দিন, আল আমীন, তাজ উদ্দিন, জমির পিতা টেনাই মিয়া সাং মায়া নগর ও জাকির মিলে মৃত অবস্থায় জ্যোৎস্না বেগমকে কোলে করে নিয়ে আসে। তখন রাত আনুঃ ২ টা। আমি তাদেরকে নিতে অস্বীকার করলে জাকির কিরিছ দিয়ে আমাকে প্রাণে হত্যার ভয় দেখায়। আমি তাদেরকে সিএনজি করে মিজানুর রহমানের বাড়ির ব্রীজের কাছে নামিয়ে দিই। মিজানুর রহমানের বাড়ির গেটের পাশে ঐ মহিলার লাশ গেটের ডেটির সাথে শাড়ি দিয়ে ঝুলিয়ে দেয়। আমি শুনেছি লন্ডনী সুফি, পিতা অজ্ঞাত সাং গন্ধ্যা এর সাথে ১নং ওর্য়াড কমিশনার মিজানুর রহমানের বিরোধ আছে। লন্ডনী সুফির আত্মীয় জাকির। লন্ডনী সুফি ৫ লক্ষ টাকা দিয়ে কন্ট্রাক করে জাকির এর সাথে মিজানুর রহমানকে ফাসাঁনোর জন্য। ঐ মহিলার লাশ মিজানুর রহমানের গেইটের সামনে ঝুলিয়ে দিতে বলে শুনেছি। তবে কার থেকে শুনেছি স্মরন নাই। লন্ডনী সুফির সাথে জাকিরের মোবাইলে নিয়মিত কথার্বাতা হয়। আমি তার পর গাড়ি নিয়ে বাড়ি চলে আসি। আকবর ও জাকির আমাকে হুমকী দেয় যেন আমি এই মহিলার কথা কাউকে না বলি। আকবর পিতা আব্দুর রহমান সাং গন্ধ্যা আমাকে ২ হাজার টাকা দিয়ে বলে তুই দেশ থেকে চলে যা। আমি ভয়ে ঢাকা শহর চলে যাই। ঘটনার পর হতে তাজ উদ্দিন এর সাথে আমার আর দেখা হয়নি। এই আমার জবানবন্দি।
ছদর মিয়ার ১৬৪ ধারায় দেয়া উক্ত জবানবন্দির পরই ঘটনার মোড় ঘুরে যায়। থানা পুলিশও ব্যাপক অভিযান ও তদন্ত মাঠে নামে। এক পর্যায়ে তৎকালীন ওসি লিয়াকত আলী একটি প্রতিবেদন প্রদান করে হবিগঞ্জের ডিবির কাছে মামলাটি হস্তান্তর করেন। ওসির প্রতিবেদনে ছদর মিয়ার জবানবন্দি এবং প্রকাশ্যে ও গোপনে তদন্তক্রমে নিহতের ভাই রজব আলী ফকির এর দায়েরী মামলায় এজাহার নামীয় কাউন্সিলর মিজানুর রহমানসহ ৫ জনের অব্যাহতি প্রার্থনা এবং আল আমীন, জাকির, তাজ উদ্দিন, জমির আলী, মহি উদ্দিন ওরপে সুফি লন্ডনী ও কানা আকবর উদ্দিন এর বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমানিত হওয়ায় অভিযোগ পত্র দাখিল করেন। এছাড়া মৃতের শরীর থেকে উদ্ধারকৃত চিরকুট এর লেখাটি আল আমীনের হাতের লেখা বলে ধারনা করা হয়েছে। অপর দিকে মামলার বর্তমান তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি ওসি আব্দুল মুক্তাদির দীর্ঘদিন ধরে মামলার তদন্তের এক পর্যায়ে মৃতের মোবাইল সেটটি উদ্ধার এবং ফোন ব্যবহারকারী ও বিক্রেতাকে আটকের পরই চাঞ্চল্যকর উক্ত হত্যাকান্ড নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। এছাড়া সগ্ধি আসামী ছদর মিয়ার ১৬৪ ধারায় দেয়া জবানবন্দিও খতিয়ে দেখছে ডিবি পুলিশ। ওসি আব্দুল মুক্তাদির বলেন, প্রকৃত অপরাধীদেরকেই আইনের আওতায় আনা হবে। নিরাপরাধ কাউকে এই মামলায় ফাসাঁনো হবে না বলেও তিনি জানান।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2021 HabiganjExpress.Com
Design and Development BY ThemesBazar.Com