রবিবার, ০১ জুন ২০২৫, ০৮:৩৪ পূর্বাহ্ন

মুরাদপুর ইউনিয়নে ১০ টাকা কেজি চাল নিয়ে ডিলারের চিনিমিনি খেলা ॥ হতদরিদ্রদের তালিকায় রয়েছেন ডিলার কামরুলের দুই মা

  • আপডেট টাইম রবিবার, ৩০ অক্টোবর, ২০১৬
  • ৮০৯ বা পড়া হয়েছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ১০ টাকা কেজি চাল নিয়ে সুবিধাভোগীদের তেলেসমাতি দেখাচ্ছেন বানিয়াচঙ্গের মুরাদপুর ইউনিয়নের ডিলার কামরুল ইসলাম। কারো নামে একাধিক কার্ড, একজনের কার্ডের নাম মুছে অন্য জনের নাম, স্বাক্ষর রেখে চাল না দিয়ে দুর্ব্যবহার করা সহ এন্তার অভিযোগ কামরুল ইসলামের বিরুদ্ধে। সরকারী নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করে ইচ্ছেমতোই চালিয়ে যাচ্ছেন তার কার্যক্রম। তার আচরণ আর কার্যকালাপ দেখে মনে হয়, তিনিই সব। তার বিভিন্ন অনিয়ম আর কার্ডধারীদের সাথে দুর্ব্যবহারে অতিষ্ট হয়ে উঠেছেন সুবিধাভোগীরা। এ নিয়ে স্থানীয় জনসাধারণ ও জনপ্রতিনিধিদের মাঝে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
img_20161029_152330জানা যায়, ইউনিয়ন পর্যায়ে হতদরিদ্রদের জন্য সরকার ১০ টাকা মূল্যে কার্ডের মাধ্যমে চাল বিক্রির লক্ষ্যে প্রতি ইউনিয়নে ২ জন করে ডিলার নিয়োগ দেয়া হয়। বানিয়াচং উপজেলার ১৪নং মুরাদপুর ইউনিয়নের ১, ২, ৩, ও ৪নং ওয়ার্ডের ডিলার নিযুক্ত করা হয় মাখনিয়া গ্রামের মৃত ছিদ্দিক মিয়ার পুত্র ইউনিয়ন কৃষকলীগ নেতা কামরুল ইসলায়াকে। নিয়োগ পাওয়ার পর তার এহেন কার্যকালাপের বিরুদ্ধে স্থানীয় ইউপি সদস্য আলী রহমান গত ২৩ অক্টোবর জেলা প্রশাসক, পুলিশ প্রশাসন, হবিগঞ্জ দুর্নীতি দমন কমিশন ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবরে পৃথক পৃথক অভিযোগ করেন। এর প্রেক্ষিতে গতকাল শনিবার দুপুরে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোঃ খালেদ হোসেন, উপজেলা খাদ্য পরিদর্শক সুশিতল সূত্রধর ও দিপক চন্দ্র দাস’এর নেতৃত্বে¡ ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি ঘটনাস্থলে যান। এ সময় একে একে এই অসাধু ডিলারের বিভিন্ন অনিয়মের তথ্য বেরিয়ে আসে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চাল বিক্রির জন্য নির্ধারিত স্থান মুরাদপুর বাজারে হলেও সেখান থেকে প্রায় ১ কিলোমিটার দূর তার নিজ বসতবাড়িতে চাল বিক্রি করে আসছে। এ বিষয়ে তার কাছে জানতে চাইলে ডিলার কামরুল ইসলাম এর কোন সঠিক উত্তর দিতে পারেনি। তিনি হতদরিদ্রদের নাম মুছে তার নিকট আত্মীয় অসংখ্য বিত্তশালী ব্যক্তির নাম লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন। এছাড়াও হতদরিদ্র তালিকা ৫৬নং ও ৯০নং নাম ডিলার কামরুলের মাতা সাজাতুন্নেছা ও সৎমা খাইরুন্নেছার নাম লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। তার আত্মীয় শিরু মিয়ার নামে ৩টি ওয়ার্ড থেকে ৩টি কার্ড করে অবৈধ ভাবে চাল বিক্রি করে আসছেন।
২নং ওয়ার্ডের ৮৬নং ক্রমিকের অনুরা বেগম, ৩নং ওয়ার্ডের ১৪৭নং ক্রমিকের সিরাজ মিয়া, ১৫৭নং ক্রমিকের সায়েরা বিবি, ৩নং ওয়ার্ডের ১৭৫নং ক্রমিকে রেজু মিয়া, ২নং ওয়ার্ডের ৭০নং ক্রমিকের কুুরফান উল্লাহ, ২নং ওয়ার্ডের ৭৩নং ক্রমিকে আনজু মিয়া, ২নং ওয়ার্ডের ৭৬ নং ক্রমিক আতাব মিয়া, ২নং ওয়ার্ডের ১০৯ নং ক্রমিক আকলিমা বেগমসহ অনেকেই জানায়, ডিলার কামরুল ইসলাম তাদেরকে চাল না দিয়ে অন্যত্র বিক্রি করে দেয়। এছাড়াও ৩নং ওয়ার্ডের তাসলিমা বেগম, আফিয়া বেগম, রুজিনা বেগম, মাফিয়া বেগমসহ অসংখ্য হতদরিদ্র নারী পুরুষ জানায়, তাদের নাম তালিকায় থাকলেও কামরুল ইসলাম বিগত নির্বাচনে স্ত্রী ছালমা বেগমসহ পরাজিত হওয়ায় তাদের চাল দিচ্ছেনা। তদন্ত কমিটির সদস্যরা ভোক্তভোগীদের এসব মৌখিক ও লিখিত অভিযোগ গ্রহন করে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, বিশিষ্ট মুরুব্বি আব্দুল খালেক মুহুরী, ওসমান মিয়া চৌধুরী, ফুলমান মিয়া তালুকদার, আনোয়ার ঠাকুর, ফুল মিয়া, ফারুক মাস্টার, অলিওর তালুকদার, ছানাউর রহমান চৌধুরী, এখলাছুর রহমান ছৌধুরী, মোঃ বাবুল চৌধুরী, মশিউর মিয়া, আউয়াল মিয়া, উয়ারিশ মিয়া, শামছু মিয়া, আব্দুনুর মিয়া, মনফর মিয়া, ২নং ওয়ার্ড মেম্বার অভিযোগকারী আলী রহমান, ৩নং ওয়ার্ড মেম্বার জামাল চৌধুরী, ১, ২, ৩ সংরক্ষিত মহিলা মেম্বার শাহানা আক্তার প্রমূখ।
এ বিষয়ে তদন্ত কমিটি জানায়, অভিযোগের প্রেক্ষিতে ডিলার কামরুল ইসলামের বিরুদ্ধে তদন্ত করা হয়েছে। উর্ধতন কর্মকর্তাদের নিকট এর রিপোর্ট পেশ করে আইনত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2021 HabiganjExpress.Com
Design and Development BY ThemesBazar.Com