শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৭:২৫ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::
হবিগঞ্জ পৌরসভার ৩ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে এমপি আবু জাহির মেয়রের সাহসী উদ্যোগের কারনেই কোটি কোটি টাকার সম্পদ উদ্ধার সম্ভব হয়েছে হবিগঞ্জে স্টেকহোল্ডারগনের সমন্বয়ে বিভাগীয় কমিশনারের অবহিত করণ সভা খোশ আমদেদ মাহে রমজান কদমচাল দরবার শরীফের উদ্যোগে ঐতিহাসিক বদর দিবস উপলক্ষে দোয়া ও ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত লাখাইয়ে ডাকাতি মামলার প্রধান আসামিসহ গ্রেফতার ৬ লন্ডনস্থ নবীগঞ্জ উপজেলা ওয়েলফেয়ার অর্গানাইজেশন ইউকের ইফতার মাহফিল মাধবপুর প্রেসক্লাবে দোয়া ও ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত দেশটিভির প্রতিনিধি আমির হামযার মোটর সাইকেল চুরি বানিয়াচংয়ে আইন শৃংখলা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হবিগঞ্জে জনকল্যাণ ট্রাস্ট এন্ড ফ্যামেলি ফাউন্ডেশন এর পক্ষ থেকে ইফতার মাহফিল

শায়েস্তাগঞ্জে আলোচিত বিউটি হত্যা বাবাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে চার্জশীট

  • আপডেট টাইম সোমবার, ২০ আগস্ট, ২০১৮
  • ৭২৭ বা পড়া হয়েছে

মোঃ ছানু মিয়া ॥ শায়েস্তাগঞ্জে ব্রাহ্মনডোরা গ্রামের ৭ম শ্রেনির ছাত্রী আলোচিত কিশোরী বিউটি আক্তার হত্যার ঘটনায় বিউটির বাবা সায়েদ আলীসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশীট প্রদান করা হয়েছে। অপর দুই অভিযুক্ত হচ্ছে বিউটির বাবার বন্ধু ব্রাহ্মনডোরা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের ৬নং ওয়ার্ড শাখার সাধারণ সম্পাদক প্রতিবেশী ময়না মিয়া ও হবিগঞ্জ সদর উপজেলার উচাইল গ্রামের ভাড়াটে খুনি কামাল মিয়া। কামাল চুরি-ডাকাতিসহ অসামাজিক কার্যকলাপের সাথে জড়িত। হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ওসি শাহ আলম গতকাল রোববার বিচারিক আদালতে চার্জশীট দাখিল করেন। চার্জশীটভূক্ত বিউটির পিতা ছায়েদ আলী গত ৭ এপ্রিল এবং ময়না মিয়া ৬ এপ্রিল আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি দিয়েছে। অপর ভাড়াটে খুনি কামাল মিয়া ঘটনার পর থেকে আত্মগোপণে রয়েছে। ময়নার দেয়া তথ্য অনুযায়ী হত্যার কাজে ব্যবহৃত ছোরা উদ্ধার করেছে। এছাড়া উক্ত হত্যার ঘটনায় বিউটির নানী লাখাই উপজেলার গুনিপুর গ্রামের ফাতেমা বেগম এবং ময়না মিয়ার স্ত্রী আছমা আক্তার মামলার স্বাক্ষী হিসেবে ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি দিয়েছে। মামলায় মুল অভিযুক্ত একই গ্রামের বখাটে বাবুল মিয়া আদালতে দেয়া স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দিতে বিউটিকে ধর্ষণের দায় স্বীকার করে হত্যার সাথে সে জড়িত নয় বলে জবানবন্দিতে জানিয়েছে।
গতকাল পুলিশ সুপার কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে পুলিশ সুপার বিধান ত্রিপুরা অভিযুক্ত ও স্বাক্ষীদের দেয়া স্বীকারোক্তিমুলক জবাবন্দিসহ দীর্ঘ তদন্ত শেষে চার্জশীট দাখিল করা হয়েছে বলে সাংবাদিকদের জানান।
প্রেস ব্রিফিংয়ে পুলিশ সুপার বিধান ত্রিপুরা বলেন, কিশোরী বিউটিকে ধর্ষণের পর বাবুল মিয়া হত্যা করেছে মর্মে মহান স্বাধীনতার মাসে লাল-সবুজের পতাকায় বিউটির লাশ নিয়ে ফেইজবুকে ভাইরাল হয়। সৃষ্টি হয় আবেগ। এতে দেশ-বিদেশে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় উঠে।
তিনি বলেন ইউপি নির্বাচনের বিরোধের স্বীকার হয়েছে বিউটি। গত ২৮ ডিসেম্বর ব্রাহ্মনডোরা ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে বাবুলের মা কলম চান ওরপে আবুলী ও আওয়ামীলীগ নেতা ময়না মিয়ার স্ত্রী আসমা আক্তার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। নির্বাচনে আসমা পরাজিত হয়। এর পর থেকে বাবুল ও তার মা আবুলীর বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে সুযোগ খুজতে থাকে ময়না। এদিকে ব্রাহ্মনডোরা গ্রামের দিনমজুর ছায়েদ আলীর কন্যা মুজাহের হাই স্কুলের ৭ম শ্রেনির ছাত্রী বিউটির সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলে প্রাণ গ্র“পের সুপারভাইজার বখাটে বাবুল মিয়া। সে ইতিপূর্বে এক প্রবাসীর স্ত্রীকে বিয়ে করে। গত ২১ জানুয়ারি বাবুল মিয়া প্রেমের ফাঁদে ফেলে বিউটিকে বাড়ি থেকে নিয়ে যায়। অলিপুর এলাকায় স্কয়ার কোম্পানীর পাশে ১ হাজার টাকা মাসে একটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে স্বামী-স্ত্রী হিসেবে বসবাস করে। ১৭ দিন পর ৯ ফেব্র“য়ারি বিউটি প্রাণ কোম্পানীতে কাজ করতে গেলে স্থানীয়রা তাকে দেখ পায়। পরে তাকে সেখান থেকে উদ্ধার সুচিউড়া গ্রামের জালাল মিয়ার বাড়ি নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ৪/৫ঘন্টা অবস্থান করে বাবুলের সাথে বিউটিকে বিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু বাবুল রাজি না হওয়ায় বিউটিকে বাড়ি নিয়ে যাওয়া হয়। পরদিন অসুস্থ অবস্থায় হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয় বিউটিকে। ৩দিন চিকিৎসার পর তাকে বাড়ি নিয়ে গিয়ে আবারো বাবুলের সাথে বিয়ে দেয়ার জন্য শালিসের মাধ্যমে চেষ্টা ব্যর্থ হয়। পরে থানায় না গিয়ে বিউটির বাবা ছায়েদ আলী ১৪ ফেব্র“য়ারি আদালতে একটি ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন। মামলাটি ৪ মার্চ শায়েস্তাগঞ্জ থানায় রেকর্ড করা হয়। ১২ মার্চ বিউটির ডাক্তারী পরীক্ষা পর ওই দিনই আদালতে ২২ ধারায় দেয়া জবানবন্দিতে বিউটি জানায় তাকে অপহরণ করা হয়নি। সে স্বেচ্ছায় বাবুলের সাথে গিয়েছে। কিন্তু বিউটি অপ্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ায় তার বক্তব্য আমলে নেয়া হয়নি। ওই মামলায় গ্রেফতারকৃত বখাটে বাবুল মিয়া ও তার মা কলম চান ওরপে আবুলীর বিরুদ্ধে গত ২৪ এপ্রিল আদালতে চার্জশীট প্রদান করা হয়।
এদিকে ১৬ মার্চ বিউটি আক্তারকে তার নানীর বাড়ি লাখাই উপজেলার গুনিপুর পাঠিয়ে দেয়া হয়। নির্বাচনে স্ত্রীর পরাজয়ের প্রতিশোধ নিয়ে ব্রাহ্মনডোরা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের ৬নং ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক ময়না মিয়া পরিকল্পনা আটে। সে ছায়েদ আলীকে বুঝাতে থাকে তার মেয়ে বিউটিকে বাবুল নষ্ট করে ফেলেছে। এতে তার অপর দু’কন্যা সোনিয়া আক্তার (৯) ও তমা (৬)কে ভবিষ্যতে বিয়ে দিতে সমস্যা হবে। বিউটিকেও বিয়ে দেয়া যাবে না। এবং বিউটি জ্বীন-পরীর ধরা তাই বার বার নিখোজ হয়। এ কথা বার বার বলে বিউটিকে মেরে ফেলে বাবুল ও তার মাকে ফাসিয়ে শায়েস্তা করার পরামর্শ দেয় আদম ব্যবসায়ী ময়না। এক পর্যায়ে ছায়েদ আলী রাজি হয়ে যায়। এ সুযোগকেই কাজে লাগায় ময়না মিয়া। সে অনুযায়ী গত ১৬মার্চ রাত ১০টার দিকে ব্রাহ্মনডোরা বটগাছের নীচে যায় ছায়েদ ও ময়না। সেখানে ভাড়া করে নিয়ে আসা উচাইল গ্রামের কুখ্যাত চোর ও ডাকাত হিসেবে পরিচিত কামাল মিয়া অপেক্ষা করছিল। এ সময় বিউটিকে হত্যার জন্য ময়নার ১০ হাজার টাকায় ভাড়া করে কামালকে। ময়না ওই আড়াই হাজার টাকা দেয় কিলার কামালকে। বাকি টাকা হত্যাকাণ্ডের পর পরিশোধ করা হবে বলে জানায়। পরিকল্পনা অনুযায়ী সেখান থেকে রওয়ানা দিয়ে ছায়েদ আলী, ময়না ও বাড়াটে খুনি কামাল লাখাই উপজেলা গুণিপুর গ্রামে বিউটির নানার বাড়ি পৌঁছান রাত সাড়ে ১২ টার দিকে। এ সময় ছায়েদ কথা বলার জন্য মেয়ে বিউটিকে চেয়ারম্যানের কাছে নিয়ে যেতে এসে বলে বিউটির নানী ফাতেমা বেগমকে জানান। প্রথমে ফাতেমা রাজি না হলেও পরে বিউটিকে তার বাবার সাথে যাবার অনুমোতি দেন। বিউটিকে নিয়ে রওয়ানা দিয়ে রাত প্রায় আড়াইটার দিকে এরা হরিণাকোণা এলাকায় এসে ময়না কথা বলার জন্য বিউটিকে রাস্তার পাশে খালের পাড়ে নিয়ে যায়। সেখানে ভাড়াটে কুখ্যাত ডাকাত কামাল বিউটির হাত-পা ছেপে ধরে রাখে। আর ময়না মিয়া তার সঙ্গে থাকা ছুরি দিয়ে বিউটির পেটসহ শরীরে একে একে ৫টি আঘাত করে। এতে নাড়িভুরি বের হয়ে ঘটনাস্থলেই বিউটি মারা যায়। হত্যার পর সেখানে খালের পানিতে রক্ত ধুয়ে মুছে রাতেই হত্যাকান্ডের স্থল থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দুরে ব্রাহ্মনডোরা পূর্ব গ্রামের হাওরে লাশ ফেলে এরা চলে যায়। পরদিন সকালে খবর পেয়ে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে। এ সময় আশপাশের কোথাও রক্তের দাগ না পেয়ে সন্দেহ করি যে, অন্যত্র কোথাও হত্যা করে লাশ এখানে ফেলা হয়েছে। এদিকে বিউটি হত্যার খবর পেয়ে তার নানী ফাতেমা খাতুন ছুটে আসলে ছায়েদ ও ময়না থাকে এ বিষয়ে কথা বলতে বারণ করে। এতে তিনি ঘটনার ব্যপারে মুখ খুলেন নি।
১৮ মার্চ বিউটির বাবা ছায়েদ আলী বাদী হয়ে বাবুল মিয়া (৩২) ও তার মা ইউপি সদস্য কলম চান বিবি আবুলী (৫০)কে আসামী করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। এর পর থেকে পুলিশ বাবুল ও আবুলীকে খুজতে থাকে। এরই মাঝে বাবুল র‌্যাবের হাতে ধরা পড়ে। বাবুলের মাকেও আমরা গ্রেফতার করে পুলিশ।
এদিকে লাশ উদ্ধারের পর থেকে বিভিন্ন কারণে বিউটির মা-বাবাকে পুলিশের সন্দেহ হয়। তাদের পর্যবেক্ষণে রাখে পুলিশ। এবং ঘটনার পর মামলা দায়ের থেকে শুরু করে সবকটি কর্মকান্ডে ছায়েদ আলীর পাশে ময়নাকে দেখতে পেয়ে তার গতিবিধিও পুলিশ পর্যবেক্ষন করতে শুরু করে। এক পর্যায়ে পুলিশ বিউটির নানী ফাতেমা বেগমকে জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে তিনি বিউটিকে তার বাড়ি থেকে নিয়ে আসা এবং হত্যাকান্ডের পর তাকে মুখ খুলতে বারন করার কথা পুলিশকে জানান। এর প্রেক্ষিতে ৫ এপ্রিল আওয়ামীলীগ নেতা ময়না মিয়াকে নিয়ে এসে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এ সময় ময়না পুরো ঘটনার বর্ণনা দেয়। পরদিন ৬ এপ্রিল আদালতে দেয়া ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দিতে ময়না হত্যার লোমহর্ষক বর্ণনা দেয়। এর পরপরই বিউটির বাবা ছায়েদ আলীকে পুলিশ গ্রেফতার করে। জিজ্ঞাসাবাদে ছায়েদ আলীও পুরো ঘটনা অকপটে স্বীকারে করে। পরদিন ৭ এপ্রিল ছায়েদও আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি প্রদান করে।
ঘাতক আওয়ামীলীগ নেতা ময়নার স্ত্রী আছমা আক্তার স্বাক্ষী হিসেবে আদালতে স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দিতে জানিয়েছে-ঘটনার সময় সে পিত্রালয়ে ছিল। বিউটি হত্যার খবর পেয়ে এলাকায় এসে এ হত্যার সাথে তার স্বামী ময়না সম্পৃক্ত এমন কানাঘোষা শুনে ময়নাকে কসম দিয়ে জিজ্ঞেস করলেও প্রথমে অস্বীকার করলেও পরে ময়না হত্যার কথা স্বীকার করে।
প্রেস ব্রিফিংকালে হবিগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আ স ম শামছুর রহমান ভূইয়া, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর সার্কেল রবিউল আলম, সহকারি পুলিশ সুপার নাজিম উদ্দিন, ডিআই-১ মাহবুবুর রহমান, ডিবির ওসি শাহ আলম, হবিগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি নাজিম উদ্দিন সহ পুলিশের কর্তকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2021 HabiganjExpress.Com
Design and Development BY ThemesBazar.Com