শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০২:২৩ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::
লাখাইয়ে কৃষি প্রণোদনা বিতরণ করলেন এমপি আবু জাহির শহরে মোতাচ্ছিরুল ইসলামের গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ এতেকাপে থাকাবস্থায় নবীগঞ্জের এক চেয়ারম্যান প্রার্থী মারামারির মামলার প্রধান আসামী ॥ প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছেন একই গ্রামের অপর প্রার্থী হবিগঞ্জে ভ্যাপসা গরমে অতিষ্ঠ শহরবাসী নবীগঞ্জে ১ কেজি গাঁজাসহ মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার মাধবপুরে কম্বাইন হারভেষ্টার যন্ত্র দিয়ে ধান কাটার উদ্বোধন রামপুর খোয়াই নদীর বাঁধ থেকে অস্ত্রসহ ২ ডাকাত আটক নবীগঞ্জে বিএনপি নেতাদের উপজেলা নির্বাচন থেকে সরে আসার আহ্বান মাধবপুরে তুচ্ছ ঘটনায় ভাতিজার হাতে চাচা খুন নবীগঞ্জের কৃতি সন্তান মাহতাব লন্ডনে ‘ফ্রিডম অব দ্য সিটি অব সম্মাননা ভূষিত হয়েছেন

নবীগঞ্জ হাসপাতালের সহকারী সজলকে গ্রেফতারের দাবীতে নবীগঞ্জ উত্তপ্ত ॥ আল্টিমেটাম ॥ অঞ্জনার লাশ দাহ না করে মাটিচাপা দেয়া হয়েছে

  • আপডেট টাইম সোমবার, ১৮ আগস্ট, ২০১৪
  • ৪৫৮ বা পড়া হয়েছে

এম এ বাছিত/কিবরিয়া চৌধুরী, নবীগঞ্জ থেকে ॥ নবীগঞ্জে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কম্পাউন্ডে কর্মরত অঞ্জনা নম (১৬) এর মৃত্যু নিয়ে নানা জল্পনা কল্পনা শুরু হয়েছে। মৃত্যুর রহস্য উদঘাটন, ধর্ষন ও হত্যার অভিযোগ নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে আইন শৃংখলা বাহিনীর একাধিক সংস্থা। ঘটনাটি মনিটরিং করা হচ্ছে পুলিশ সুপার কার্যালয় থেকে। গতকাল ময়নাতদন্ত শেষে নিহতের লাশ স্বজনদের নিকট হস্তান্তর করেছে পুলিশ। সুষ্ঠ বিচারের দাবিতে সনাতন ধর্মালম্বীরা অঞ্জনার Nabiganj Sojol Dev copyলাশ দাহ না করে মাটিচাপা দিয়েছে। আজ সোমবার সকাল ১০টায় দত্তগ্রাম জিউর আখড়ায় ৮ গ্রামের সমন্বয়ে বৈঠক আহবান করা হয়েছে। অঞ্জনার গৃহকর্তা অভিযুক্ত সজলকান্তি দেবকে নিয়ে আলোচনায় সরব উপজেলার জনপদ। তাকে গ্রেফতারের দাবিতে সোচ্ছার সুশীলসমাজসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ। গতকাল সন্ধায় শহরে সজলকে গ্রেফতার ও মামলা নেয়ার দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সজল দেবকে থানায় ডেকে নিয়েও গ্রেফতার না করে ছেড়ে দেয় এনিয়ে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। জনরোষ থেকে নিজেকে রক্ষায় লাপাত্তা রয়েছে হাসপাতালের অফিস সহকারী সজল কান্তি দেব। তবে পুলিশের দাবি নিহতের পরিবার এখানো থানায় মামলা দিচ্ছে না।
দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র জানায়, নবীগঞ্জ উপজেলার দত্ত গ্রামের বাসিন্দা রাজেন্দ্র সরকারের কন্যা অঞ্জনা (১৬) উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান সহকারী সজল কান্তির বাসায় বিনা পারিশ্রমিকে গৃহকর্মী হিসেবে কর্মরত ছিল। প্রায় ৮ বছর পূর্বে অঞ্জনাকে লেখাপড়া করানো ও বিয়ে দেবার শর্তে সজল দেব বাসায় নিয়ে আসেন। ধীরে ধীরে অঞ্জনা বড় হয়ে বিবাহ উপযুক্ত হয়।
গত শুক্রবার সজল দেব স্ত্রী শিউলীকে নিয়ে গ্রামের বাড়ি লাখাই উপজেলার করাব চলে যান। ঘরে তালাবদ্ধ করে রেখে যান অঞ্জনা (১৬)কে। শনিবার সকালে এসে শিউলী দরজা খোলে বাসায় অঞ্জার মৃতদেহ দেখতে পান। এ সময় চারদিকে দূর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। নাকে মুখে রক্তের দাগ দেখা যায়। সাথে সাথে থানায় খবর দেয়া হয়। নিহতের পরিবারকে জানানো হয় অঞ্জনা আত্মহত্যা করেছে। পুলিশ লাশ উদ্ধার এবং গৃহকর্তা সজল কান্তি দেবকে থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে। অনেকের প্রশ্ন সজল বেড়াতে যাবার সময় অঞ্জনাকে সব সময় সাথে নিয়ে যেতেন। কিন্তু গত শনিবার তাকে সাথে না নিয়ে ঘরে তালাবদ্ধ করে রেখে গিয়ে ছিলেন কেন?
এদিকে সজল দেবের বিরুদ্ধে এলাকাবাসীর অভিযোগ অঞ্জনাকে ধর্ষন ও গর্ভবতী করার নিজেকে রক্ষায় কৌশলে হত্যা করা হয়েছে। পরে তা আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেবার চেষ্টা হচ্ছে। ঘটনার পর থেকে এলাকাবাসী অভিযুক্ত সজলকে গ্রেফতারের দাবি জানিয়ে আসছে। এদিকে দরিদ্র পরিবারকে আইনী প্রক্রিয়া থেকে বিরত থাকার হুমকি দেয়ার অভিযোগ উঠে। তবে অঞ্জনার মৃত্যুর রহস্য রহস্য উদঘাটনে অবিলম্বে সজল দেবকে গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ।
হাসপাতালের প্রধান অফিস সহকারী সজল চন্দ্র দেবকে নিয়ে জল্পনা কল্পনার অন্ত নেই। প্রায় দু’যুগ ধরে সজল দেব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত রয়েছে। তার বিরুদ্ধে সরকারী ঔষধ বিক্রিসহ অসংখ্য দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতাসহ বিভিন্ন অভিযোগ উঠেছে। বিধি বহির্ভূত ভাবে অফিসার কোয়াটার রজনীগন্ধায় বসবাস করত। হাসপাতাল সূত্র জানায়, সজল দেব জামালপুর জেলার শেরপুর এলাকার শিউলী রানী দেবকে প্রথম বিয়ে করে। পরে প্রেস নিবেদনের মাধ্যমে লাখাই উপজেলার একই নামের অপর যুবতী শিউলী রানীকে দ্বিতীয় বিয়ে করে সজল। সজল প্রথম স্ত্রী শিউলীকে নিয়ে নবীগঞ্জ হাসপাতাল কোয়াটারে বসবাস করলেও ২য় স্ত্রী থাকেন হবিগঞ্জ শহরে। সজল দেবের গ্রামের বাড়ি হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলার করাব গ্রামে।
অনেকের প্রশ্ন গর্ভবতী হয়ে পড়ায় অঞ্জনাকে ম্যানেজ করতে না পেরে পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করা হয়েছে। বাসার ভেতরে অঞ্জনাকে রেখে তালা লাগানোর রহস্য কি ? এসব নিয়ে চলছে চুলছেড়া বিশ্লেষন। আন্দোলনকারী নেতারা এসব বিষয় খতিয়ে দেখার জন্য আইন শৃংখলা বাহিনীর নিকট দাবি জানিয়েছেন। অনুসন্ধানে দেখা যায়, স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ এ ঘটনাকে আত্মহত্যার স্বীকৃতি দিতে নারাজ। এদিকে গতকাল সন্ধ্যায় শহরে মিছিল ও প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রতিবাদ সভায় সভাপতিত্ব করেন স্থানীয় ইউপি সদস্য আবদুল হাকিম। ছাত্রদল নেতা অলিউর রহমানের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন, দত্ত গ্রামের বিশিষ্ট মুরুব্বী সাবেক মেম্বার অনিলপুর কায়স্থ, বাসদ নেতা চৌধুরী ফয়ছল শোয়েব, মনর উদ্দিন, থানা ছাত্রদল আহবায়ক হারুনুর রশীদ হারুন,কমান্ডার খালেক. আহমদ ঠাকুর রানা, শাহেদুল ইসলাম চৌধুরী রিপন, আবদুর রকিব, শফিক মিয়া, কাশেম চৌধুরী প্রমূখ। সমাবেশে বক্তারা ময়না তদন্ত রিপোর্ট নিয়ে সংশ্রয় প্রকাশ করেন। আন্দোলনকারীরা বলেন, সজল দেব লম্পট ও চরিত্রহীন লোক। তার বিভিন্ন অপকর্ম কারো অজানা নয়। বক্তারা বলেন, ২৪ ঘন্টার মধ্যে খুনি সজলকে গ্রেফতার ও নিহতের পরিবারকে হয়রানী বন্ধের দাবী জানান। অন্যথায় হরতালসহ সর্বাত্বক আন্দোলনের কর্মসূচী ঘোষণার হুশিয়ারী দেয়া হয়।
সার্বিক বিষয়ে থানার ওসি মোঃ লিয়াকত আলী বলেন, ময়নাতদন্ত রিপোর্ট এখনো পাইনি। নিহতের লাশ স্বজনদের নিকট হস্তান্তর হয়েছে। মামলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, থানায় কোন প্রকার অভিযোগ দায়ের হয়নি। অহেতুক পুলিশকে দোষ দিয়ে লাভ নেই।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2021 HabiganjExpress.Com
Design and Development BY ThemesBazar.Com