কাউছার আহমেদ রিয়ন, শ্রীমঙ্গল থেকে ॥ শ্রীমঙ্গলে রাস্তার পাশে রাত্রিযাপন করা আনুমানিক সত্তোরোর্ধ এক বৃদ্ধকে ছেলের হাতে বুঝিয়ে দিলেন শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম।
সোমবার (২০ এপ্রিল) বিকেলে স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মী ও জনপ্রতিনিধির সহায়তায় পরিবারের খোঁজ পেয়ে পুত্রের সাথে যোগাযোগ করে তাকে সেলফোনে হবিগঞ্জ সড়কে ডেকে এনে পুত্র লিটন বৈদ্যের হাতে পিতাকে তুলে দেন। ওই বৃদ্ধের নাম ধীরেন্দ্র বৈদ্য বলে জানান তাঁর ছেলে।
জানা যায়, এ লোকটি অনেকদিন যাবত সড়কের পাশে একটি বিপনীর বহিঃবারান্দায় রাত্রিযাপন করতেন এবং দিনের বেলা যে যা দিতো তাই দিয়ে কোনমতে জীবনযাপন করতেন। এই করোনার প্রাদুর্ভাবের সময়ে মানুষের ‘ঘরে থাকা’ অত্যাবশ্যক অথচ এ বৃদ্ধ ব্যক্তিটি মাসের পর মাস ধরে এ সংকটকালেও পড়ে রয়েছিলেন খোলা আকাশের নীচে।
স্থানীয় এক গণমাধ্যমকর্মীর কাছ থেকে খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম, সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাহমুদুর রহমান মামুন ও ৩ নং সদর ইউপি চেয়ারম্যান ভানু লাল রায় ঘটনাস্থলে গিয়ে এ বৃদ্ধের খোলা আকাশের নিচে রাত্রিযাপনের দৃশ্য অবলোকন করেন এবং তাঁকে পরিবারের নিকট তুলে দিতে তৎপর হন। সোমবার বিকেলে তাঁর পুত্র লিটন বৈদ্যের হাতে বৃদ্ধকে তুলে দেন। এ সময় বৃদ্ধ ধীরু বৈদ্যের শ্যালক উপস্থিত ছিলেন। তাৎক্ষনিকভাবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিজের পক্ষ থেকে কিছু অর্থসহায়তা প্রদান করেন এবং ভবিষ্যতে সরকারী সকল সহযোগীতা করার আশ্বাস দেন।
এ ব্যাপারে পুত্র লিটন বৈদ্য বলেন, ‘আমার বাবা কিছুটা মানসিকভাবে অগোছালো, তাকে ঘরে রাখা আমাদের জন্য কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়, এরআগেও আমি তাঁকে পরিবারের সাথে রাখার চেষ্টা করেছি কিন্তু তিনি বের হয়ে চলে আসেন। আমি আমার বাবাকে পরিবারেই রাখতে চাই, ইউএনও মহোদয়ের নিকট আমি চিরকৃতজ্ঞ যে তিনি এই করোনার সময়ে আমার পিতার ‘ঘরে থাকা’ নিশ্চিতে এগিয়ে এসেছেন এবং সরকারীভাবে সহযোগীতার আশ্বাস দিয়েছেন। আমি যে করেই হোক আমার পিতাকে পরিবারের সাথে রাখব।
এ ব্যাপারে শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, ‘স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীর কাছ থেকে খবর পেয়ে আমি এ বিষয়টি সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণ করি। করোনার এই পরিস্থিতিতে বৃদ্ধ ধীরু বৈদ্যকে তাঁর পরিবারের নিকট তুলে দিতে সংকল্পবদ্ধ হই। খোঁজ নিয়ে পরিবারের সন্ধান পাই এবং তাঁর পুত্র লিটন বৈদ্যকে ডেকে এনে পিতাকে পুত্রের দেখভালের নিমিত্তে তুলে দেই। আমরা চাই না, বাংলাদেশে গৃহহীন কেউ থাকুন। এ ব্যাপারে সরকারী সহায়তার ব্যবস্থা করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও ব্যক্ত করি পাশাপাশি এ বৃদ্ধ যাতে পারিবারিক আবহেই থাকেন সে ব্যাপারে তাঁর পুত্রকে জানিয়ে দেই।