Habiganj Express | হবিগঞ্জ এক্সপ্রেস

আজ মহান মে দিবস

আবু হাসিব খান চৌধুরী পাবেল ॥
এমন এক যুগ ছিল যখন শ্রমিকরা তাদের ন্যায্য অধিকার ও দাবি দাওয়ার কথা মন খুলে ও মুখ ফুটে বলতে পারত না মালিক সমাজকে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দিনে রাতে ১৬-১৮ ঘন্টা কাজ করত। তাদের ছিল না কোন ছুটি, ছিল না কোন সুযোগ সুবিধা, ছিল না কোন স্বাধীনতা। তারা দুঃখ-কষ্টে জীবিকা নির্বাহ করত। দাবি দাওয়া কথা উঠলে মালিকরা তাদের উপর ক্ষেপে যেতো, এমনকি মালিকদের ভাড়াটে সন্ত্রাসী দিয়ে তাদের উপর জুলুম করত। মালিকরা শ্রমিকদের ওপর অতিরিক্ত কাজ চাপিয়ে দিতো। এমন অত্যাচার যখন তাদের ওপর চলছিল তখন শ্রমিকরা প্রতিবাদী হয়ে উঠে। প্রথম দিকে তাদের প্রতিবাদের তেমন সাহস ছিল না। ধীরে ধীরে শ্রমিকরা সব শ্রেনীর শ্রমিকদের ঐক্যবদ্ধ করতে শুরু করে। ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রথমে দশ ঘন্টা কাজের দাবীতে ও ন্যায্য অধিকার জন্য আন্দোলন শুরু হয়। বিশ্বের মধ্যে ১ম ট্রেড ইউনিয়ন ফিলাডেলফিয়ার মেকানিক ইউনিয়ন* ১৮২৭ সালে আন্দোলন সূত্রপাত ঘটায়। তাদের এ দাবী মালিক পক্ষ মেনে নেয়। কিন্তু মুখ দিয়ে মেনে নিলেও বাস্তবে শ্রমিকদের উপর নির্যাতন অব্যাহতই রাখে। ১৮৮৬ সালের কথা ৬৭ টি ট্রেড ইউনিয়নের শ্রমিকরা ঐক্যবদ্ধ হয় এবং কাজের সময় ৮ ঘন্টার জন্য আবারোও দাবি করে। কিন্তু দাবি তুলতেই মালিক পক্ষ মেনে নিতে পারেনি। ঐ সময় শ্রমীক সমাজ তাদের দাবি আদায়ের লক্ষে ধর্মঘটের ডাক দেয়। তাদের ধর্মঘটের আহব্বান শুনে মালিক পক্ষ ক্ষেপে উঠে। পাশাপাশি বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় শ্রমিকদের বিরুদ্ধে রিপোর্ট লেখা করে। এ অবস্থায় মালিক ও শ্রমিক পক্ষ উভয়েই সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। উত্তাল হয়ে উঠে জনপদ। একদিকে শ্রমিকরা তাদের দাবি আদায়ে অনর। অন্যদিকে মালিকপক্ষ তাদের দাবি মানতে নারাজ। এ অবস্থা অত্যন্ত পরিস্থিতি নাজুক হয়ে দাড়ায়। ১৮৮৬ সালের পহেলা মে শ্রমিকরা আবারো তাদের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে ধারাবাহিক শ্রমিক ধর্মঘটের আহ্বান করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরে হে মার্কেটে স্কোয়ারে ধর্মঘট পালন শুরু হয়। শ্রমিকরা কল কারখানা ছেড়ে নেমে আসে রাস্তায়। মিছিল করে ধর্মঘটে শরিক হতে থাকে শ্রমিকরা। শ্রমিকরা শিকাগো শহর দখল করে নিলে পুলিশ তাদের ঘিরে রাখে। সে দিন ধর্মঘটে তেমন কোন অ্যাকশন ও বাধা দেয়নি পুলিশ। কিন্তু এ দিনও যখন মালিকপক্ষ শ্রমিকদের দাবি দওয়া মেনে নেয়নি, তাই তারা পর দিন আবারোও ধর্মঘট পালন করলো। এ দিন মালিকদের ভাড়াটে সন্ত্রাসী আর পুলিশ শ্রমিকদের উপর চড়াও হয়। পুলিশের গুলিতে নিহত হয় ৭ শ্রমিক। এ অবস্থায় শ্রমিক নেতা অগস্ট স্পাইজ তার কর্মচারীদের নিহতদের প্রতিশোধ এবং শ্রমিকদের দাবি আদায়ের জন্য ৪ মে প্রতিবাদ সভা আহ্বান করেন। শিকাগো মার্কেট স্কোয়ারে প্রতিবাদ কর্মসূচি শুরু হয়। তাদের কর্মসূচি শুরুর কিছুক্ষণের মধ্যে পুলিশ তাদের বাহিনী নিয়ে সভা স্থলে উপস্থিত হয় এবং কর্মসূচী বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়। কিন্তু শ্রমিকরা তাদের প্রতিবাদ বন্ধ না করে সভা চালিয়ে গেলে পুলিশ এবং মালিক পক্সের ভাড়াটে সন্ত্রাসীরা অতর্কিত হামলায় শ্রমিকদের উপর। শুরু হয় আবারও তান্ডব। নিহত হয় আরোও ৪ শ্রমিক নেতা। আহত হয় শতাধিক শ্রমিক নেতা ও কর্মী। আটক করে নেয়া হয় তাদের কারাগারে। শুরু হয় তাদের বিচার। ১৮৮৬ সালের ৯ অক্টোবর তাদের বিচারের রায় দেয়া হয় মৃত্যুদন্ড। কিন্তু এ রায় মেনে নিতে পারেনি শ্রমিক নেতারা। তারা রায়ের প্রতিবাদ করে। শুরু হলো মিছিল, মিটিং, বক্তৃতা, সমাবেশ। দেশÑবিদেশে সরকারের কাছে সাহায্য চাওয়া হয়। কিন্তু তাদের প্রতিবাদ কোন কাজে আসে না। শ্রমিক নেতাদের মৃত্যুদন্ডের মওকুফের আবেদন জানানো হয়। আবেদন অগৃহীত হয়। ফাসির রায় রয়ে গেলো। শ্রমিকনেতাদের দেখার কোন সুযোগ দেয়া হলো না তাদের পরিবারকে। ১৮৮৭ সালের ১১ নভেম্বর ফাঁসি হয়ে যায়। শ্রমিক নেতাদের। পরবর্তীতে ১৮৮৯ সালের ১৪ জুলাই অনুষ্ঠিত ইন্টারন্যাশনাল সোশালিস্ট কংগ্রেসে পহেলা মে শ্রমিক দিবস হিসাবে ঘোষনা দেয়া হয়। আর সেই থেকে বিভিন্ন দেশে পালিত হচ্ছে মে দিবস। পরবর্তিতে ১৮৯০ সালের ১ লা মে তারিখকে শ্রমিক দিবস ঘোষনা করা হয়। আর সে দিন থেকে পহেলা মে *মে দিবস* হিসেবে সারা বিশ্বে উদযাপন করা হয়। এ দিন শ্রমিকের রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল শিকাগো শহর। তাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে এ দিবসটিকে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস হিসেবে পালন করা হয়।