Habiganj Express | হবিগঞ্জ এক্সপ্রেস

নবীগঞ্জে আমনে বাম্পার ফলন কৃষকের মুখে হাসি ॥ কাটা শুরু

এটিএম সালাম, নবীগঞ্জ থেকে ॥ কুয়াশার চাদর ভেদ করে উকি দিচ্ছে সকালের সুর্যের ঝিলিক। মৌ মৌ গন্ধে মুখরিত হেমন্তের মৃদু বাতাসে দোলা খাচ্ছে মাঠের সোনালি ধানের ফসল। ফিঙে আর শালিকের উড়াউড়ি করে আকাশে। এসব কিছু দেখার ফুসরত নেই কৃষকের। মাঠের পাকা ধান কেটে তুলতে হবে গোলায়। নবীগঞ্জ উপজেলার হাওর গুলোতে এখন চলছে আমন ধান কাটার উৎসব।
উপজেলার জোয়ালভাঙ্গা হাওরসহ বিভিন্ন হাওরে দেখা গেছে কৃষক-কৃষাণীরা আমন ধান কাটা ও মাড়াইয়ে ব্যস্ত রয়েছে। এ সময় একাধিক কৃষক জানান অনুকুল পরিবেশ ও পোকা মাকড়ের আক্রমন কম থাকায় আমনের ভাল ফলন হয়েছে।
কৃষি অফিসের হিসাব মতে উপজেলায় ১৩টি ইউনিয়নে ১ হাজার ৩শ ৮০ হেক্টর জমিতে আমনের চাষ হয়েছে, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি।
এদিকে আমন ধান কাটা শুরু হওয়ার সাথে সাথেই ধানের দাম কমতে শুরু হওয়ায় কৃষকের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে। লাভের আশায় চাষ করে ধানের দাম দেখে হতাশায় ভোগছেন কৃষকরা। অতিরিক্ত মূল্যে বীজ, সার, কীটনাশক, ডিজেলসহ নানা উপকরণ কিনে চাষাবাধ করেছেন তারা। কিন্তু বাজারে গিয়ে ধানের কাংখিত দাম পাচ্ছেন না। এক মন ধান ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কৃষকেরা জানিয়েছেন, এত কম দামে ধান বিক্রি করে তাঁদের উৎপাদন খরচ উঠবে না। অন্যদিকে মৌসুমের শুরুতেই ধানের দাম কম হওয়ায় ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিরা মহাজন এবং পাওনাদার ও একশ্রেণীর দাদন ব্যবসায়ীদের টাকা পরিশোধের ব্যাপারে দুঃশ্চিন্তায় পড়েছেন। কৃষকেরা বলেছেন ধানের দাম ন্যুনতম ৯শ থেকে ১ হাজার টাকা না পেলে পোষানো যাবে না। তারা জানান, ধানের দরপতনে নবীগঞ্জে কয়েক হাজার কৃষকের কষ্টার্জিত নতুন ধান ঘরে তোলার আনন্দকে ম্লান করে দিতে পারে। একাধিক কৃষক জানান এ বছর সময় মত বৃষ্টি হওয়ায় পোকার আক্রমন ছিল কম। কৃষকেরা আশাবাদী এ বছর বাম্পার ফলন নিয়ে ঘরে উঠতে পারবেন। কৃষক জাহির আলী জানান চলতি অগ্রহায়ণে হাওরের পুরো ধান কাটা শেষ হয়ে যাবে। তিনি জানান, খরচ ও কষ্টের তুলনায় আমন ধানের দাম অনেক কম। জোয়াল ভাঙ্গা হাওরের কৃষক সিরাজ মিয়া বলেন, খরচ আর ধানের দাম মিলিয়ে লোকসান ছাড়া লাভ হবে না। তিনি বলেন ‘পোকার আক্রমণ ছিল কম, নিয়মিত বৃষ্টিও হয়েছে। প্রতি হেক্টর জমিতে ধান হয়েছে গড়ে সাড়ে ৫ মেট্রিক টন। এতে চাল হবে সাড়ে ৩ মেট্রিক টন করে”। তবে বাজার মূল্য কম থাকায় দুঃখ প্রকাশ করেন তিনি।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ দুলাল উদ্দিন জানান, আমন আবাদের শুরু থেকেই কৃষি বিভাগের পরামর্শ দেওয়ায় এ বছর আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে প্রাকৃতিক বিপর্যয় দেখা না দিলে সুষ্ঠুভাবে কৃষকরা ধান মাড়াই সম্পন্ন করতে পারলে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে তিনি মন্তব্য করেন।