Habiganj Express | হবিগঞ্জ এক্সপ্রেস

মাধবপুরে দেওগাঁ ৩ গম্বুজ জামে মসজিদ যাচাই বাছাই করে সংরক্ষণে পদক্ষেপ নিতে জেলা প্রশাসককে পত্র

মাধবপুর প্রতিনিধি ॥ মাধবপুর উপজেলার বহরা ইউনিয়নের দেওগাঁ গ্রামে প্রাচীন ঐতিহাসিক এই মসজিদের সোন্দর্য, নির্মাণ-শৈলী এবং স্থাপত্য কলা অবলোকন করতে দিন দিন দর্শনার্থীদের ভিড় বাড়ছে। এই মসজিদের একটি ফার্সী ফলকে এর সংস্কারকাল মোঘল স¤্রাট আকবরের শাসনামলে বলে উল্লেখ আছে। তবে এর নির্মাণ এর অনেক আগে বলে ইতিহাস গবেষকদের ধারনা। দিল্লি সালতানাত আমলে এর নির্মানকাল না হয় মোঘল স¤্রাট বাবর বা হুমায়ুন এর সময়কালে হতে পারে। মসজিদটির সামনে থাকা একটি প্রাচীন দিঘিসহ একটি পুরানো মাজার রয়েছে যাকে স্থানীয়রা দরবেশ হযরত বদরুদ্দিন শাহ মাজার বলে উল্লেখ করেন। জঙ্গল-বাশবন ঘেরা উচু উচু টিলা এবং ঘনবৃক্ষের অন্যরকম পরিবেশের কারণে এলাকাটি অত্যন্ত ব্যতিক্রমী হওয়াতে দর্শনার্থীদের আগ্রহ বাড়ছে দিন দিন।
ঐতিহাসিক তথ্য সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ পাঠানদের অধীনে থাকাকালীন তাদের দ্বারা মাঝে মধ্যেই ত্রিপুরায় আক্রমন হতো এই এলাকা তৎকালীন ত্রিপুরার অংশ ছিল। এক যুদ্ধে পাঠান বাহিনীর সেনাপ্রধান কাশিম খাঁ ও দাউদ খাঁ নামক বিশেষ বীরত্ব প্রদর্শনপূর্বক এ অঞ্চলের বিজয় অর্জন করেন। তারা এখানে বসতির ইচ্ছা প্রকাশ করলে স¤্রাট তাদেরকে এখানকার কিছু ভূমি উপহার দেন। এর মধ্যে কাসিম খাঁ দিনাদহ নামক এলাকা প্রাপ্ত হন। দিনাদহ তখন থেকে কাসিম খাঁর নামানুসারে কাশিমনগর হিসেবে নাম হয়। পরবর্তীতে দীর্ঘ এলাকা নিয়ে কাশিমনগর পরগণা প্রতিষ্ঠিত হয়। এই দিনাদহেরই একাংশ ছিল দেওগাঁ। কাশিম খাঁর বসতি স্থাপনের পর থেকে এখানে আস্তে আস্তে মুসলিম জনগণ বাড়াতে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় এই মসজিদ হতে পারে মনে করেন অনেকে। অথবা মসজিদকে কেন্দ্র করে তৈরি হয় এই মুসলিম জনপদ।
প্রাচীন এই এই মসজিদটি ইট সুরকি নির্মিত ৩ গম্বুজ বিশিষ্ট একটি দ্বিতল ভবন। এর আয়তন উত্তর-দক্ষিণে দৈর্ঘ ৩৭ ফুট এবং পূর্ব-পশ্চিমে প্রস্থ ৩৩ ফুট। ২ ভাগে বিভক্ত ভবনের পশ্চিমাংশ অর্থাৎ মূল ভবন দ্বিতল বিশিষ্ট। প্রস্থ ১৬ ফুট ৬ ইঞ্চি করে ২ অংশের অভ্যন্তর ভাগ ৪ ফুট প্রস্থের দেয়াল দ্বারা বিভক্ত। পশ্চিমাংশের মূল ভবন তিনটি কক্ষে বিভক্ত। তন্মধ্যে মধ্যের কক্ষের অভ্যন্তর ভাগ বর্গাকার ১০ ফুট আয়তন বিশিষ্ট। উভয় পাশের কক্ষ প্রতিটির আয়তন ১০ফুট, ৮ফুট ৬ইঞ্চি পরিমান। কক্ষ ৩ টি প্রতিটির সামনে ও পেছনে একটি করে দরজা রয়েছে।
এই মসজিদের খাদেম আফজাল চৌধূরী জানায়, এ মসজিদের অভ্যন্তরে একটি ফলক রয়েছে যেখানে ফারসি ভাষায় লিখিত আছে এই মসজিদ আকবরের আমলে সংস্কার করা হয়েছে। এর নির্মাণ অনেক আগে। দিল্লি সালতানাতের আমলেও হতে পারে। মসজিদের নিচতলায় অনেকগুলো বসতি রুম রয়েছে। যে গুলোয় মুসাফির সাধু-সন্ন্যাসীরা থাকতো বলে মনে হয়। নৃত্তাত্ত্বিক গবেষণা পরিচালনা করলে আরো অনেক কিছু বেরিয়ে আসতো।
বহরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ আলাউদ্দীন জানান, প্রাচীন এই জামে মসজিদ আমাদের ইউনিয়ন তথা উপজেলার গর্ব। দিন দিন এর দর্শনার্থীর সংখ্যা বাড়ছে। এটি সংস্কার, গবেষনা, প্রচারের জন্য বিভিন্ন ফোরামে কথা বলে যাচ্ছি।
প্রতœতত্ত্ব অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট এলাকার আঞ্চলিক পরিচালক একেএম সাইফুর রহমান বলেন, এটি প্রাচীন স্থাপনা হতে পারে তবে এর মধ্যে অনেক সংস্করণ, পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করা হয়েছে বলে মনে হয়। এলাকাবাসীর পক্ষে এটি সংরক্ষন ও গবেষণা করতে মহাপরিচালকের নিকট একটি আবেদন দেয়া হয়েছে। আমরা নির্দেশনা পাওয়া মাত্র জায়গাটি পরিদর্শন করতে যাব। সরেজমিন পরিদর্শনের ভিত্তিতে এটি সংরক্ষণের আওতায় আসতে পারে।
এদিকে সাংবাদিক মুসাহিদ মসির আবেদনের প্রেক্ষিতে সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয় থেকে বিষয়টি যাচাই পূর্বক গবেষণা ও সংরক্ষণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসককে পত্র দেয়া হয়েছে।