শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০২:৩৮ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::
লাখাইয়ে কৃষি প্রণোদনা বিতরণ করলেন এমপি আবু জাহির শহরে মোতাচ্ছিরুল ইসলামের গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ এতেকাপে থাকাবস্থায় নবীগঞ্জের এক চেয়ারম্যান প্রার্থী মারামারির মামলার প্রধান আসামী ॥ প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছেন একই গ্রামের অপর প্রার্থী হবিগঞ্জে ভ্যাপসা গরমে অতিষ্ঠ শহরবাসী নবীগঞ্জে ১ কেজি গাঁজাসহ মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার মাধবপুরে কম্বাইন হারভেষ্টার যন্ত্র দিয়ে ধান কাটার উদ্বোধন রামপুর খোয়াই নদীর বাঁধ থেকে অস্ত্রসহ ২ ডাকাত আটক নবীগঞ্জে বিএনপি নেতাদের উপজেলা নির্বাচন থেকে সরে আসার আহ্বান মাধবপুরে তুচ্ছ ঘটনায় ভাতিজার হাতে চাচা খুন নবীগঞ্জের কৃতি সন্তান মাহতাব লন্ডনে ‘ফ্রিডম অব দ্য সিটি অব সম্মাননা ভূষিত হয়েছেন

মাধবপুরের সফল তরমুজ চাষী আমজাদ খান ॥ তরমুজ বিক্রি করে ৪ বছরে আয় করেছেন ৩ কোটি টাকা

  • আপডেট টাইম মঙ্গলবার, ১১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪
  • ৮৬৩ বা পড়া হয়েছে
আমজাদ খানের চাষকৃত তরমুজ।

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পদক প্রাপ্ত কৃষক আমজাদ খান ২০১১ সালে ২০ শতক জায়গায় তরমুজ চাষ শুরু করেছিলেন। এ বছর (২০১৪) ৫০ একর ভূমিতে তরমুজ আবাদ করেছেন। ২০১১ থেকে ১৪ পর্যন্ত ৪ বছরে আমজাদ খান তরমুজ বিক্রি করে কমপক্ষে ৩ কোটি টাকা আয় করছেন। আগাছা প্রতিরোধক ও পরিবেশ বান্ধব পলিথিন (মালফিং শিট) ব্যবহার এবং শ্রম-মেধা ব্যবহার করে এ বিপ্লব ঘটিয়েছে বলে কৃষি বিভাগ জানায়।
জানা যায়, জেলার মাধবপুর উপজেলার মাধবপুর গ্রামের হরমুজ আলীর পুত্র আমজাদ খান ২০১১ সালে মাত্র ২০ শতক ভূমিতে তরমুজ আবাদ করে  ১ লাখ ১৫ হাজার টাকা আয় করেন। ২০১২ সালে ৩ বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ করে আয় করেছেন ৩ লাখ ১৫ হাজার টাকা। ২০১৩ সালে ১০ একর জায়গায় তরমুজ আবাদ করা হয়। ওই বছর ৪৫ লাখ টাকার তরমুজ বিক্রি করেন। এ বছর ২০১৪ জমির পরিমান কয়েকগুন বৃদ্ধি পেয়ে ৫০ একর জমিতে তরমুজ আবাদ করা হয়। পরিবেশ অনুকুলে থাকলে এ বছর প্রায় দেড় কোটি টাকার তরমুজ বিক্রি হবে বলে জানায় কৃষক আমজাদ খান। এ তরমুজ চাষের জন্য মালোয়েশিয়া থেকে এক ধরনের পলিথিন (মালফিং শিট) আমদানী করতে হয়। ২০১৩ সালে ১২ লাখ টাকা এবং ১৪ সালে ২২ লাখ টাকার পলিথিন আমদানী করা হয়। এ পলিথিনে তরমুজ, ঝিংগা, করল্লা, স্ট্রবেরি আবাদ করা হয়। যা আগাছা প্রতিরোধক ও পরিবেশ বান্ধব। পাশপাশি জমির আদ্রতা ধরে রাখতে সম এ পলিথিন সিলেট বিভাগের মধ্যে একমাত্র আমজাদ খাই ব্যবহার করে থাকেন বলে কৃষি বিভাগ জানিয়েছেন। সফল এ কৃষক শুধু রমজান মাসে জেসমিন-১ ও জেসমিন-২ জাতের তরমুজ চাষ করে ১৫ লাখ টাকা আয় করেছেন। তারা জানায় বর্ষাকালীন তরমুজ এখন ১২ মাস আবাদ করা যায়। যাতে ফলও ভালো আসে। এ ব্যাপারে সফল তরমুজ চাষী আমজাদ খান বলেন,  বর্র্ষাকালীন ও বারোমাসী একটি তরমুজ ২-৪কেজি পর্যন্ত ওজনের হয়। যার একটির মূল্য কমপক্ষে দেড়শ থেকে ২শ টাকা পর্যন্ত হয়। তবে মওসুমী একটি তরমুজ কমপক্ষে ১৮ থেকে ২০ কেজি ওজনের হয়। এ তরমুজ কমপক্ষে ৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়। তিনি বলেন, ইচ্ছা, মনোবল, একাগ্রতা থাকলে সবজি উৎপাদন করে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানী করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। আমজাদ খান জানান, বর্ষাকালে সবজি চাষ করতে বিশেষ ধরনের পলিথিন দিয়ে জমিতে মেরী ঢেকে দেওয়া হয়। এক একর জমিতে তরমুজ চাষ করতে পলিথিন বাবদ ৪২ হাজার টাকা, গোবর ১০ হাজার, সার ৪ হাজার, বীজ ৯ হাজার, মাচার জন্য বাশঁ ২৪ হাজার, মাচায় পাতার নেট ১০ হাজার, শ্রমিক ২০ হাজার, এবং বালাই নাশক ২ হাজার টাকা সমেত প্রায় সোয়া লাখ টাকা খরচ বলে জানান আমজাদ খান। তিনি আরও বলেন, ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল ২০ দিনের তরমুজের চারা রোপন করেন। চারা রোপনের ৫৫ দিনের মধ্যে ফলন শুরু হয়। ১০ জুলাই থেকে প্রতি কেজি তরমুজ ৬০/৭০ টাকা করে ঢাকার কারওয়ান ও স্থানীয় বাজারে বিক্রি হয়। শীত মওসুম পর্যন্ত তরমুজ বিক্রি চলবে বলে জানান কৃষক আমজাদ। তিনি জানান, জানুয়ারী-ফেব্র“য়ারী মাসে গরমের সময়ের জন্য মওসুমী তরমুজের ফলন শুরু হবে। যে জন্য ইতিমধ্যে চারা তৈরীর কাজ জমির প্রস্তুতি চলছে। এদিকে আমজাদ খানের সফলতা দেখে মাধবপুর উপজেলার কমলানগর গ্রামের তাজুল ইসলামের পুত্র রফিকুল ইসলাম, জমত আলীর ছেলে বদিউজ্জামান ও মনোহরপুর গ্রামের রাজেন্দ্র চন্দ্র সূত্রধরের ছেলে সুবল চন্দ্র সূত্রধর তরমুজের আবাদ শুরু করেছেন। এ ৩ বন্ধু মিলে রপ্তানীকারক প্রতিষ্ঠান এগ্রী কনসার্ন লিমিটেড এর মহারাজা ও গ্রীন জায়েন্ট জাতের তরমুজ করে সফলতা পেয়েছেন।
মাধবপুর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০১২ সালে উপজেলার ৩শ হেক্টর জমিতে তরমুজ আবাদ করা হয়। এতে ৩ হাজার ৬শ মেট্রিক টন তরমুজ উৎপাদন হয়। ২০১৩ সালে ৩শ ৫০ হেক্টর জমিতে তরমুজের উৎপাদন হয় ৪ হাজার মেট্রিক টন। এ বছর ৫শ হেক্টর জমিতে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬ হাজার মেট্রিক টন। এর বাজার মূল্য হবে ৩শ ৬০ কোটি টাকা। কৃষি বিভাগ আরও জানায় হবিগঞ্জ জেলার মধ্যে একমাত্র মাধবপুর উপজেলায় তরমুজের আবাদ হয়। বর্তমানে ১২শ তরমুজ চাষী রয়েছে। আগামীতে এর সংখ্যা আরও বাড়বে বলে জানায় কৃষি বিভাগ। এ ব্যাপারে মাধবপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আতিকুল হক বলেন, আমজাদ খান আধুনিক পদ্ধতিতে কৃষি চাষাবাদে সফলতার সহিত চমৎকার দৃষ্টান্ত স্থাপন করে এখন কৃষকের মডেল হয়ে দাঁিড়য়েছেন। যে কারনে প্রতি বছর স্থানীয়রা তরমুজ চাষে এগিয়ে আসছেন। তিনি বলেন দেশের পুষ্টি চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে কীটনাশকমুক্ত তরমুজ রপ্তানী করা সম্ভব হবে।
উল্লেখ্য উপজেলার মাধবপুর গ্রামের হরমুজ আলীর ছেলে আমজাদ খান ১৯৮৯ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাশের পর কীটনাশক ও বীজ ব্যবসা শুরু করেন। এ ব্যবসায় তার তেমন সফলতা আসেনি। ২০০৭ সালে তার পৈত্রিক ২০ শতক ভূমিতে পরীক্ষামূলক উচ্চ ফলনশীল টমেটো চাষ করে লাভবান হওয়ায় তিনি সবজি চাষাবাদে মনোযোগী হয়ে পড়েন। এরপর উপজেলায় চৌমুহনী ইউনিয়নের গোপিনাথপুর গ্রামে জমি লিজ নিয়ে টমেটো, তরমুজসহ বিভিন্ন সব্জি আবাদ করে লাভবান হন। তার উৎপাদিত টমেটো সিঙ্গাপুরে রপ্তানী শুরু করেন এয়ার কনসার্ন নামক একটি কোম্পানী। এ থেকেই বিদেশে বাংলাদেশের টমেটো রপ্তানী শুরু। টমোটোতে সফলতা আসায় আমজাদ খান ২০১১ থেকে তরমুজ আবাদ শুরু করেন। এখন তার সফলতায় উপজেলায় অনেকে এখন তরমুজ চাষে এগিয়ে এসেছেন। আমজাদ খান জমিতে সুষম সার ও কীটনাশক মুক্ত সবজি চাষ ও বিদেশে সব্জি রপ্তানীর জন্য আমজাদ খান বাংলাদেশ একাডেমি ফর এগ্রিকালচার-২০১২ সালের ক্রেষ্ট অব মেরিট পুরষ্কার পেয়েছেন। তাছাড়া ২০১৩ সালের ২১ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমজাদ খানকে বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পদক (রৌপ্য) লাভ করেন।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2021 HabiganjExpress.Com
Design and Development BY ThemesBazar.Com