এটিএম সালাম/কিবরিয়া চৌধুরী/আলমগীর মিয়া, নবীগঞ্জ থেকে ॥ নবীগঞ্জে মা ও দুই শিশু সন্তানের রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। তাদের মৃত্যু হত্যা না-কি আত্মহত্যা, এ নিয়ে ধুম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। কেউ কেউ বলছেন-স্বামী ও পরিবারের লোকজন তাদেরকে হত্যা করেছে। পক্ষান্তরে স্বামী দাবী করছেন-দুই সন্তানকে হত্যার পর স্ত্রী নিজে আত্মহত্যা করেছে। নিহতরা হচ্ছে-নবীগঞ্জ উপজেলার বড় ভাকৈর ইউনিয়নের বড় ভাকৈর গ্রামের কৃষক ফরিদ মিয়ার স্ত্রী রুমেনা খাতুন (৩০), ছেলে মুসা মিয়া (৭) ও মেয়ে মুসলিমা খাতুন (৫)। এর মধ্যে রুমেনার লাশ পুকুর পাড়ে একটি জারুল গাছে ঝুলন্ত অবস্থায় এবং দুই সন্তানের লাশ পুকুর থেকে উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় ফরিদ মিয়াকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। রুমেনার স্বামী ফরিদ মিয়া দাবী করছেন রুমেনা একজন মানসিক রোগী ছিলেন। তিনি জানান, শনিবার রাতে খাবার শেষে সবাই ঘুমিয়ে পড়েন। রাত অনুমান ২টার দিকে তার ঘুম ভাঙ্গলে স্ত্রী ও সন্তানদের বিচানায় না দেখে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। এক পর্যায়ে বাড়ির পাশে পুকুর পাড়ে একটি জারুল গাছে স্ত্রী রুমেনার ঝুলন্ত এবং পুকুরে দু’সন্তানের ভাসমান লাশ দেখতে পান। এ সময় ফরিদ উদ্দিন চিৎকার দিলে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এসে পুকুর থেকে দু’সন্তানের লাশ উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে আসেন।
এ দিকে রুমেনার বাবা উপজেলার গজনাইপুর ইউনিয়নের মামদপুর গ্রামের মাসুক মিয়া জানান, দীর্ঘ দিন ধরে তাদের মধ্যে দাম্পত্য কলহ চলে আসছিল। প্রায় ২মাস আগে দাম্পত্য কলহের জের ধরে রুমেনা ও তার দুই সন্তান নিয়ে বাবার বাড়ি আটক ছিল। এক পর্যায়ে সালিসে মিমাংসার মাধ্যমে স্বামীর বাড়ি ফিরে আসে। রুমেনার বাবা ও তাদের আত্মীয় স্বজনদের দাবী রুমেনার স্বামী ফরিদ মিয়া তাদেরকে হত্যা করে আত্মহত্যার নাটক তৈরী করেছে।
রুমেনার চাচাতো ভাই শাহীন মিয়া জানান, ভোর ৫টার দিকে রুমেনার দেবর বোরহান উদ্দিন ফোনে তাদের জানায়, ফরিদ মিয়া তার স্ত্রী রুমেনা ও দু’সন্তানকে হত্যা করেছে। খবর পেয়ে স্থানীয় লোকদের নিয়ে বোনের বাড়ি ভাকৈর গ্রামে ছুটে আসি। এ সময় বোনের মৃতদেহ ঝুলন্ত অবস্থায় এবং দু’অবুঝ সন্তানের মৃতদেহ ঘরে ভিতরে পড়ে থাকতে দেখি। পানিতে ভিজানোর কোন আলামত পাওয়া যায়নি বলেও দাবী শাহীনের। শাহীন বলেন, তার বোন ও সন্তানদের স্বামী ফরিদ উদ্দিন ও তার পরিবারের লোকজন হত্যা করেছে। তারা এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তসহ ঘাতকদের ফাঁসি দাবী করেছেন।
স্থানীয় চেয়ারম্যান মেহের আলী মহালদার বলেন, ফরিদের বাড়ি থেকে আমাকে মোবাইলে ঘটনা সম্পর্কে জানানোর সময় তাদের কথাবার্তায় অসংলগ্ন বলে মনে হয়েছে। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তক্রমে দোষীদের শাস্তির দাবী জানান তিনি।
এ ব্যাপারে নবীগঞ্জ থানার ওসি লিয়াকত আলী জানান, ময়নাতদন্ত রিপোর্ট আসার পর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে। খবর পেয়ে হবিগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শহীদুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
এ ব্যাপারে রুমেনার চাচা আসুক মিয়া বাদী হয়ে ফরিদ উদ্দিনসহ ৬জনকে আসামী করে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। মামলার অন্য আসামীরা হচ্ছে, ফরিদ উদ্দিনের দুই ভাই বোরহান উদ্দিন ও শাহাব উদ্দিন, রুমেনার জা ফাতেমা বেগম এবং দুই প্রতিবেশী তারা মিয়া ও আফজল মিয়া।
মামলায় উল্লেখ করা হয়, রুমেনার স্বামী ফরিদ উদ্দিনের সাথে অপর এক মেয়ে সম্পর্ক ছিল। এ ব্যাপারে রুমেনা প্রতিবাদ করলে মনোমালিন্য সৃষ্টি হয়। এর জের ধরেই ঘটনাটি ঘটেছে।