আবুল হোসেন সবুজ, মাধবপুর থেকে ॥ মাধবপুরে এক ব্যক্তির সাথে মা-মেয়ের প্রেমে সম্পর্ককে কেন্দ্র ক্ষুব্ধ সানু মিয়া স্ত্রী-কন্যাকে কুপিয়ে হত্যা করে পুলিশে আত্ম সমর্পন করেছে। ঘটনাটি ঘটেছে গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে মাধবপুর উপজেলার শাহজাহানপুর ইউনিয়নের উত্তর সুরমা গ্রামে। স্ত্রী ও কন্যা হত্যার পর পাষন্ড সানু মিয়া (৫০) স্বেচ্ছায় তেলিয়াপাড়া পুলিশ ফাঁড়িতে আত্মসমর্পন করে। নিহতরা হচ্ছে স্ত্রী জরিনা বেগম (৩৬) ও মেয়ে মাসুমা বেগম (১৬)। পরে থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুল বাছেদ, ওসি তদন্ত আজমিরুজ্জামান, তেলিয়াপাড়া ফাড়ির আইসি সহিদুল্লাহ পিপিএম ঘটনাস্থলে গিয়ে নিহতদের লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসেন।
জানা যায়, প্রায় ১৮ বছর পূর্বে বি-বাড়িয়া জেলার নাছিরনগর উপজেলার চিতনা (ধরমন্ডল) গ্রামের হোকুম আলীর ছেলে সানু মিয়া মাধবপুর উপজেলার উত্তর সুরমা গ্রামের সুনামদ্দিনের মেয়ে জরিনা বেগম (৩৬) কে বিয়ে করে। বিয়ে পর থেকে সানু মিয়া শ্বশুর বাড়ীতে বসবাস করছিলেন। তাদের সংসারে ২ ছেলে, ১ মেয়ের জন্ম হয়। ১ম ছেলে জাহাঙ্গির (১৮), ২য় মেয়ে মাসুমা বেগম (১৬) ও ৩য় ছেলে হৃদয় মিয়া (০৮)। আত্ম সমর্পনের পর সানু মিয়া পুলিশ ও উপস্থিত সাংবাদিকদের জানান, দীর্ঘদিন যাবত একই গ্রামের ছাবু মিয়ার ছেলে তাউছ মিয়া প্রথমে তার স্ত্রী জরিনার সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলে। জরিনা-তাউছের প্রেমের এক পর্যায়ে মেয়ে মাসুদার সাথেও তাউছ প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলে। মা-মেয়ের সাথে তাউছের প্রেমের সম্পর্কের বিষয়টি প্রকাশ পেলে এ নিয়ে এলাকায় একাধিক শালিস অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু এতে কোন সমাধান আসে নি। মা-মেয়ে ও তাউছের প্রেম চলতে থাকে নিয়মিত। এ নিয়ে প্রায়ই সানুর সাথে মা-মেয়ের ঝগড়া হতো। এতে অতিষ্ট হয়ে এসএসসি পরীক্ষার্থী ছেলে জাহাঙ্গীর বাড়ি ছেড়ে মামার বাড়ি চলে যায়। মা-মেয়ের সাথে ঝগড়া বিবাদের অতিষ্ট হয়ে সানু মিয়াও বাড়ি থেকে চলে যায়। এ সুযোগে তাউছের সাথে মা-মেয়ে চুটিয়ে প্রেম চালিয়ে যায়। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল ৫ টার দিকে সানু মিয়া বাড়ি এসে ঘরের দরজা বন্ধ দেখতে পান। এ সময় তিনি জানা দিয়ে তাউছের সাথে স্ত্রী জরিনাকে অসংলগ্ন অবস্থায় দেখতে পান। সানুর উপস্থিতি আচ করতে পেরে তাউছ পালিয়ে যায়। এ নিয়ে সানু মিয়ার সাথে স্ত্রী জরিনা ও মেয়ে মাসুমার ঝগড়া শুরু হয়। এ অবস্থায় ঝগড়ায় যোগ দেয় তাউছ। সে সানু মিয়াকে বিভিন্ন ভাবে হুমকী প্রদান করতে তাকে। এক পর্যায়ে রাত ৯টার দিকে ক্ষুব্ধ সানু মিয়া দা দিয়ে স্ত্রী জরিনা ও মেয়ে মাসুমাকে এলোপাতারি কুপিয়ে হত্যা করে। তাদের মৃত্যু নিশ্চিত হবার পর সানু মিয়া বাড়ি থেকে বেড়িয়ে তেলিয়াপাড়া পুলিশ ফাড়িতে গিয়ে স্ত্রী-কন্যাকে হত্যা করার বিষয়টি পুলিশকে অবহিত করে আত্ম সমর্পন করেন। তেলিয়াপাড়া ফাড়ির আইসি সহিদুল্লাহ পিপিএম ঘটনাটি সাথে সাথে মাধবপুর থানার ওসি আব্দুল বাছেদকে অবহিত করেন। পরে ওসি আব্দুল বাছেদের নেতৃত্বে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মা-মেয়ের লাশ উদ্ধার করে। বিষয়টি এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে।
সানু মিয়া জানান, স্ত্রীকে পর পুরুষের সাথে অসংলগ্ন অবস্থায় দেখে আর টিক থাকতে পারিনি। দা হাতে নিয়ে কাকে কুপিয়েছি তাও সঠিক বলতে পারবো না। তিনি জানান, তাউছসহ তার শ্বশুর বাড়ির লোকজন তাকে মেরে ফেলতে পারে এ ভয়ে তিনি ঘটনার পর পরই দৌড়ে তেলিয়াপাড়া ফাঁড়ি এসে আত্মসমর্পন করেন।
এ ব্যপারে থানার আফিসার ইনচার্জ আব্দুল বাছেদ জানান, অপরাধী নিজেই পুলিশের নিকট আত্মসমর্পন করে অপরাধ স্বীকার করেছে। আইন অনুযায়ী তার বিচার হবে।
ঘটনার খবর পেয়ে রাতেই অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ শহিদুল ইসলাম ও সহকারী পুলিশ সুপার মোজাম্মেল হক ঘটনাস্থলে ছুটে যান।